কলকাতা: পর পর বেআইনি বাজি কারখানার বাড়বাড়ন্ত রুখতে এবং বিস্ফোরণে প্রাণহানি এড়াতে ক্লাস্টার তৈরির ঘোষণা হয়েছিল। সেই নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রিসভায় একপ্রস্থ আলোচনাও হয়। এদিক ওদিক গজিয়ে ওঠা বাজি কারখানাগুলিকে বন্ধ করে ক্লাস্টার গড়ে তোলা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যার আওতায় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এক জায়গায় পর পর অনেকগুলি কারখানা গড়ে তোলা হবে বলে ঠিক হয়। (Duttapukur Incident)
কিন্তু রবিবার দুপুরে দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ প্রমাণ করে দিল, বারুদের স্তূপেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলা। কারণ গত মার্চ মাস থেকে এখনও পর্যন্ত বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল চারটি। বাজির দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রাণহানি হয়েছে ২৮ জনের। দত্তপুকুর বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বাড়লে, বাড়বে সামগ্রিক হতাহতের সংখ্যা।
গত ২০ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনার মহেশতলায়, ভর সন্ধেয় তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণটি ঘটে সেখানকার পুটখালী মণ্ডলপাড়ায় একটি বাজি কারখানায়। ওই বাজি কারখানার মালিকের স্ত্রী, সন্তান এবং এক প্রতিবেশীর মৃত্যু হয়। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছিল বাজি কারখানাটি। বিস্ফোরণের পর অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এর পর, গত ১৬ মে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল গ্রামে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্ত ভানু বাগ-সহ ১২ জনের মৃত্যু হয়। বেআইনি ভাবে ওই কারখানাটি গড়ে ওঠে। তার মালিক ছিলেন ভানু। বিস্ফোরণে আহত হয়ে ওড়িশা পালিয়ে যান তিনি। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। (Illegal Fireworks Factories)
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে বেআইনি ভাবে মজুত করে রাখা বাজি ফেটে বিস্ফোরণ ঘটে গত ২২ মে। একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়। যেখানে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখান থেকে কয়েক গাড়ি বোঝাই করে বাজি এবং বাজির মশলা উদ্ধার করা হয়। পুলিশের একাংশকেই বলতে শোনা যায় যে, গোটা এলাকা কার্যত বারুদের স্তূপের উপর বসেছিল। কিন্তু পুলিশ এবং প্রশাসনের নাকের ডগায় কী ভাবে চলছিল বেআইনি বাজি কারখানাটি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয়রা। যদিও বাজির বিরুদ্ধে পুলিশি তল্লাশি নিয়ে আবার অসন্তোষ প্রকাশ করেন বাজি ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভের হুঁশিয়ারিও দেন।
এর একদিন পরই, গত ২৩ মে মালদার ইংরেজবাজারে নেতাজি কমার্শিয়াল মার্কেটে বাজির দোকানে কার্বাইডের ড্রাম ফেটে আগুন ধরে যায়। আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় দু'জনের। তাতেই এবার নয়া সংযোজন দত্তপুকুর। রবিবার সকালে সেখানে একটি বেআইনি বাজি কারখানায় তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে এখনও পর্যন্ত আট জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত তিন শিশু ও মহিলা-সহ বেশ কয়েক জন। বিস্ফোরণের তীব্রতায় উড়ে গিয়েছে অভিযুক্ত সামসুল আলি ওরফে 'খুদে'র বাড়ির একাংশ। বিস্ফোরণের আগুনে ঝলসে গিয়েছেন বেশ কয়েক জন। উড়ে গিয়েছে হাত-পা। এদিন বিস্ফোরণের শব্দ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বারাসাত শহরও কেঁপে ওঠে।