সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা : স্বপ্ন আকাশে উড়ান ভরার। কিন্তু আপাতত বাস্তবের রূক্ষ মাটিতে সংসারের হাল টানতে ধরতে হয়েছে টোটোর হাতল। বয়স মাত্র ১৫ বছর। ছোট্ট বয়সেই অভাবের সংসারে পাইলটের ভূমিকায় গায়ত্রী হালদার (Gayatri Halder)। গাইঘাটার ঢাকুরিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রীর দিন শুরু হয় খানিক অন্যভাবে। সাতসকালে ঘুম থেকে ওঠেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পরে সে। ফিরে এসে স্কুল। তারপর পড়াশোনা মিটিয়ে বাড়ি ফিরে ফের একবার বেরিয়ে পরা। চলছে এভাবেই।


বাবা অলোক হালদার চালাতেন টোটো। ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার জেরে শারীরিক সক্ষমতা হারান। স্ত্রী ও দুই মেয়ের সংসার নিয়ে কার্যত সমস্যার সাগরে পড়েন। কিন্তু সেই সময়ই কার্যত জেদ করে বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁর টোটো নিয়েই বেরিয়ে পরে ছোট মেয়ে। তারপর থেকে চলছে সেভাবেই। মেয়ে সংসারের জন্য যে কাজ করছে তা নিয়ে বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে বাবার। যা হোক করে কথা জুগিয়ে অলোক হালদার বলেন, বাড়ির জন্য করছে কাজ। তবে আমার খুব কষ্ট হয়।


সংসারের হাল টানতে স্কুলে সেভাবে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পায়না গায়ত্রী। যদিও তা নিয়ে খুব একটা আপশোস নেই। বলা ভাল, ভাবার সময় নেই। স্কুলের শিক্ষিকারাও ছোট মেয়ের লড়াইকে কুর্নিশ জানান। গাইঘাটা ঢাকুরিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রত্না রায় বলেছেন, ওইটুকু মেয়ের লড়াই দেখে কষ্ট হয়। আশা রাখি কেউ বিষয়টা দেখবেন।


যে বয়সে স্কুলে আর পাঁচজনের সঙ্গে পড়াশোনা, খেলায় মেতে থাকার বয়স সেই সময়ে এভাবে জীবনযুদ্ধ চালানো গায়ত্রীর লড়াই ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। স্থানীয় তৃণমূল নেতা গোবিন্দ দাস বলেছেন, ঘটনাটা জানি। খুবই দুঃখজনক। যাতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টা পৌঁছয়, দেখব। অন্য কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে। আর বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডলের কটাক্ষ, রাজ্যের দূরবস্থার নিদর্শন। মেয়েটির লড়াই জানি। সাংসদকে জানিয়েছি বিষয়টা।


গায়ত্রী অবশ্য দিন গোনে দিন বদলের। এখনও স্বপ্ন দেখে পাইলট হওয়ার। আর বাবা সুস্থ হয়ে গেলে আর টোটো চালাতে হবে না বলেও বাড়িতে কথা দিয়েছে ক্লাস নাইনের মেয়ে। সঙ্গে অপেক্ষা সুদিনের।


আরও পড়ুন- জলের তোড়ে ভাঙল বাঁশের সেতু, জলবন্দি ভাটোরার ৬০ হাজার মানুষ


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial