সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: একদিকে সাংসদ, অন্যদিকে বিধায়ক। শাসক দলের দুই হেভিওয়েট নেতার বিবাদ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে একে অপরকে নানা বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন বারবার। পরিস্থিতি সামলাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। তারপরেও বিবাদ মেটার ছবি সামনে এল না। ফের ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংকে নিশানা করলেন জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। আক্রমণ শানিয়েছেন বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুবোধ অধিকারী। নতুন বছরেও দোরগোড়াতেও দ্বন্দ্বের ছবি উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas TMC) তৃণমূলে।
এবার ফাইল-নিয়ে হুঁশিয়ারি বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের (Somnath Shyam)। জগদ্দলের তৃণমূল (TMC) বিধায়ক বললেন, 'হলুদ ফাইলের সেই প্রমাণও বের করেছি। ৪০/২০২২। এর পুরো তথ্য আমার কাছে আছে। পুলিশ কমিশনারকে দেব। আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেব।' কীসের ফাইল? সোমনাথ শ্যাম বলেছেন, 'আমার হলুদ ফাইলে বিভিন্ন এই ধরনের খুন, যেগুলো বিগত দিনে হয়েছে। ২০১৯ এবং ২০১৯ই শুধু নয়, বিকাশ বোসের মার্ডারের পর থেকে যত খুন হয়েছে, সেই একটা একটা খুনের আমি কাগজ জোগাড় করছি।' এই বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, 'কে কী বলল আই ডোন্ট কেয়ার। কিচ্ছু আসে যায় না।'
২৪ ঘণ্টা আগেই, দুই নেতার দ্বন্দ্ব মেটাতে বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সেই বৈঠকে অর্জুন সিং উপস্থিত হলেও, গরহাজির ছিলেন সোমনাথ শ্যাম। তার পরেরদিনই ব্যারাকপুরের সাংসদকে, নাম না করে আক্রমণ জারি রাখলেন জগদ্দল ও বীজপুরের দুই তৃণমূল বিধায়ক। সোমনাথ শ্যাম যখন 'হলুদ ফাইল' নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তখন কটাক্ষ করে বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, 'সোমনাথ মানে কী? শিব। শিবকে কি বাণ মারা যায়? না শিবের মাথায় জল ঢালা যায়? তাঁকে শিবের মাথায় জল ঢালতে হবে আগামী দিনে।' তাঁর আরও দাবি, 'একদিকে পাণ্ডবের কথা বলছে, একদিকে কৌরবের কথা বলছে আমি সেই কুমড়োর কথা বলছি। ২০২৪ আসছে। সেই হনু কোন ডালে গিয়ে বসবে আর কোন ডালে গিয়ে আসবে...আমাদের সকল যারা মা মাটি মানুষের সৈনিক আছে সেই নজরটা কিন্তু আপনারা রাখবেন।'
পাল্টা অর্জুন সিংহের (Arjun Singh) তোপ, 'এখানে মমতা ব্যানার্জির কথায় ভোট হয়। মমতা ব্যানার্জি আশীর্বাদ দিলে সে রাস্তায় থাকবে আর না হলে থাকবে না। সুব্রত বক্সী বলে দিয়েছেন এই নিয়ে কিছু না বলতে। কে কী বলল আই ডোন্ট কেয়ার। কিচ্ছু আসে যায় না।'
তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব খুনের (Vicky Yadav Murder) পর থেকেই ব্যারাকপুরের সাংসদ এবং জগদ্দলের বিধায়কের মধ্যে টানাপোড়েন তুঙ্গে উঠেছে। নিত্যদিন একে অপরকে নিশানা করতে কোনও কসুর করছেন না এই দুই নেতা। এই পরিস্থিতিতে শনিবার নৈহাটিতে যুযুধান দুই নেতাকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। এমনকি নৈহাটি যাওয়ার পথে অর্জুন সিংকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন সুব্রত বক্সী। কিন্তু সূত্রের খবর, নৈহাটি পুরসভায় পার্থ ভৌমিকের ঘরে, ঘণ্টাখানেক ধরে বসে থাকলেও আসেননি সোমনাথ শ্যাম। যদিও জগদ্দলের বিধায়কের দাবি, 'আমাকে যদি ছোট্ট একটা সত্যনারায়ণ ভগবানের পুজোতেও ডাকা হয় আমি চেষ্টা করি সেখানে পৌঁছবার। আমার কাছে এরকম কোনও নির্দেশ বা মেসেজ ছিল না যে আমাকে ওখানে যেতে হবে। এটা ভুল খবর যে উনি আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন। উনি নৈহাটি উৎসবে আমন্ত্রিত ছিলেন সেখানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। তার আগে উনি নৈহাটি পুরসভায় এসেছিলেন অন্য কোনও ব্যাপারে।'
তৃণমূলের এই দ্বন্দ্ব নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধী দলগুলি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury) বলেন, 'অন্তর্দ্বন্দ্বের ক্যান্সারে তৃণমূল দল আক্রান্ত। আর সেই ক্যান্সারের কোনও অ্যানসার নেই। অর্থাৎ তৃণমূল দল ধীরে ধীরে টার্মিনাল স্টেজে চলেছে। এটা ব্যারাকপুর কেন সব পুরেই পাবেন আপনি।' বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, 'কালকে সুব্রত বক্সী যখন গেছিলেন তখন দেড় ঘণ্টা পর পার্থ ভৌমিক পৌঁছেছিল। যদি মানসম্মান থাকে তাহলে নয় ওদেরকে তাড়াবে নয় নিজে পদত্যাগ করবে।'
আরও পড়ুন: রামমন্দিরে যেতে চান? খরচ দেবেন শুভেন্দু! কতজনকে নিয়ে যাবেন?