উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, সন্দেশখালি: একটি একটি করে দিন এগোলেও, সন্দেশখালিতে ক্ষোভের আগুন নেভার নাম নেই। শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার, অজিত মাইতিরা একে একে ধরা পড়লেও, এখনও অধরা সবের মূলে থাকা শেখ শাহজাহান। সেই আবহে নিত্য-নতুন আরও অভিযোগ উঠে আসছে। এবার স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হলেন দেওয়াললিখন শিল্পীরা। (Sandeshkhali Case)
সন্দেশখালি ১ এবং ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা তিন নেতা, শাহজাহান, শিবু এবং উত্তমের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ভেড়ির জন্য চাষের জমি দখল, জমি কেড়ে নিয়ে প্রাপ্য অর্থ না মেটানো, হুমকি, হুঁশিয়ারি-সহ বহু অভিযোগ সামনে এসেছে। এবার শিল্পীকে দিয়ে দেওয়ালে লিখিয়ে, সেই টাকাও না মেটানোর অভিযোগ সামনে এল। (TMC Brigade Rally)
সংবাদমাধ্যমের সামনে সেই নিয়ে মুখ খুলেছে শিল্পীরা। স্থানীয় তিন শিল্পী জানিয়েছেন, একসঙ্গে তৃণমূলের হয়ে দেওয়াললিখনের কাজ করতেন তাঁরা। সন্দেশখালি এবং সংলগ্ন এলাকায় দেওয়াললিখনের দায়িত্ব তাঁদের উপরই ন্যস্ত ছিল। কিন্তু তাঁরা তাঁদের কাজ করে দিলেও, টাকা মেলেনি আজ পর্যন্ত। প্রাপ্য যেহেতু মেলেনি, তাই আগামী দিনে তৃণমূলের হয়ে আর দেওয়াললিখনের কাজ করবেন না বলেও জানিয়েছেন শিল্পীরা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তৃণমূলের হয়ে দেওয়াললিখনের কাজ করেন শিল্পী অভিজিৎ সর্দার। তাঁর বক্তব্য, "শেখ শাহজাহানের কথায় দেওয়াললিখন করে দিয়েছিলাম। এখনও সেই কাজের ৮০ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। টাকা পাইনি আমি। তাই আর দেওয়াল লিখব না সন্দেশখালিতে।"
শিল্পীরা বেঁকে বসায় আপাতত রং-তুলি হাতে তুলে নিতে হয়েছে সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতকে। কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে সন্দেশখালিতে দেওয়ালে রং-তুলি বোলাতে দেখা যায় তাঁকে। শুধোলে তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেন, " আপনারা জানেন সন্দেশখালিতে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এখন যদিও সন্দেশখালি শান্ত। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল কর্মীরা খুশি। আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেওয়াললিখনের কাজ করছি।"
আগামী ১০ মার্চ ব্রিগেডে সমাবেশ রয়েছে তৃণমূলের। সেই উপলক্ষেই এখন সন্দেশখালিতে দেওয়াললিখনের কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজের দায়িত্ব গিয়ে পড়েছে বিধায়কের উপর, এতদিন যা শিবু সামলাতেন। কিন্তু সন্দেশখালির সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভএর আগুন, সব মিলিয়ে সন্দেশখালির মানুষকে ব্রিগেডমুখী করা যাবে তো? আশা ছাড়ছেন না বিধায়ক। তাঁর দাবি, কিছু লোক দলের ক্ষতি করেছেন বটে। তবে আবার দলকে মানুষের মনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা কয়েক জন। সন্দেশখালি থেকে বহু মানুষ ব্রিগেড যাবেন বলে আশা করছেন তিনি।
কিন্তু ED-র উপর হামলার ৫৫ দিন পরও যখন অধরা শাহজাহান, তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে, সেই আবহে দলীয় নেতৃত্ব সন্দেশখালির দেওয়াললিখন পড়তে পারছেন কি? উঠছে এই প্রশ্নও।