সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: অন্য দল থেকে তৃণমূলে যোগদান এবং পুরনো কর্মীদের মর্যাদা নিয়ে শ্যামনগরে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। আর এই প্রেক্ষাপটে তাঁর নামের উল্লেখ করেই জগদ্দল বিধানসভার শ্যামনগরে পড়ল ব্যানার। আর ব্যানার বিতর্কে দুই সুর তৃণমূল বিধায়ক এবং সদ্য বিজেপি (BJP) থেকে তৃণমূলে ফেরা অর্জুন সিংহের (Arjun Singh)।
অভিষেকের সভার পরই পোস্টার
সোমবার শ্য়ামনগরের সভায় অভিষেক বলেন, "এলাকার শান্তি বিঘ্নিত করতে চাইলে, তৃণমূলের পুরনো কর্মীর গায়ে আঁচড় পড়ে, আমি ছেড়ে কথা বলব না।" বিজেপি থেকে নেতাদের ফেরত নেওয়া প্রসঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আপনারা চান দরজা খুলব না দরজা বন্ধ? খুলব? খুলব না? আপনারা চান দরজা বন্ধ করে রাখব?" দর্শকদের কোছ থেকে প্রতিক্রিয়া না পেয়ে বলেন, "তাই হল, দরজা বন্ধ। দরজা বন্ধ।"
বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা নেতা এবং পুরনো কর্মীদের মর্যাদা প্রসঙ্গে এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন অভিষেক। তাঁর এই বার্তার পরই জগদ্দল বিধানসভায় একাধিক জায়গায় ব্যানার দেখা গেল, যাতে লেখা রয়েছে, 'দরজা বন্ধ, সুবিধাবাদীদের কখনও তৃণমূলে নয়।"
কাদের পক্ষ থেকে ব্যানার দেওয়া হয়েছে, তা লেখা না থাকলেও, তৃণমূলের পুরনো কর্মীদের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে এই ব্যানারে। বলা হয়েছে, কোনও পুরনো কর্মীর গায়ে হাত পড়লে তৃণমূল ছেড়ে কথা বলবে না।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: প্রকল্প বিলম্ব আট বছর ধরে, সরকারি আধিকারিককে কানমলা দাওয়াই মুখ্যমন্ত্রীর
তবে এই ব্যানার বিতর্কে সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়া অর্জুন সিংহ এবং জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের গলায় শোনা গেল দু’রকমের সুর। অর্জুন বলেন, "কে কেন পোস্টার লাগাচ্ছে জানি না। মনে হচ্ছে অভিষেকের সভাকে অপমানকে করা হচ্ছে। উনি কি বার্তা দিয়েছেন, তারপর পোস্টার লাগানো, আমি জানি না। সবাই শুনেছে।" অন্য দিকে, সোমনাথ বলেন, "আজ দল ছেড়ে যাবেন, আবার আসবেন। এই ধরনের নীতি ঠিক নয়। খালি ব্যবসার জন্য অনেকে দলে আসে। তৃণমূলের স্টেজে এসে জায়গা পেয়ে যাবে সেই বার্তা দিয়েছে নেতৃত্ব।"
স্থানীয় সূত্রে দাবি, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের মুখে, অর্জুন তৃণমূল ছাড়ার পর সোমনাথের সঙ্গে তাঁর বিবাদ তীব্র হয়। অর্জুনের খাসতালুক ভাটপাড়া বিধানসভায় সোমনাথকে আহ্বায়ক নিয়োগ করে তৃণমূল।
সোমবার অভিষেকের সভায়, ভোট-পরবর্তী হামলায় নিহত শোভারানি মণ্ডলের পরিবারের এক সদস্য আসায়, অসন্তোষ প্রকাশ করেন জগদ্দলের তৃণমূলের বিধায়ক সোমনাথ। আর এই প্রেক্ষাপটেই ব্যানার বিতর্কে তৃণমূলের উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি।
এই প্রসঙ্গে বিজেপি-র ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সাংসদ দলবদলের পর থেকে তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের গন্ডগোল চলছে। নিজেদের মধ্যে বিড়ম্বনায় এসব করছে। বিধায়ক-সাংসদ যুদ্ধ চলছে। পুরোপুরি কলহ।"
অর্জুনকে নিয়ে অসন্তোষ তৃণমূলে!
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন হল, অর্জুন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর, তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে প্রকাশ্যে সার্বিক ঐক্যের ছবি তুলে ধরা হলেও, সবাই মন থেকে একমত হতে পেরেছেন তো? কারণ সম্প্রতি দলের তারকা বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী এ নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এক একে বাকিরাও এ বার অসন্তোষ জানাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।