রাজা চট্টোপাধ্যায়- জলপাইগুড়ি, শুভেন্দু ভট্টাচার্য- কোচবিহার : ভয়াবহ অবস্থা উত্তরবঙ্গে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত উত্তরের একাধিক জেলা। উদ্ধারকাজে নেমেছে এনডিআরএফ- এর একাধিক টিম। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন সেনাবাহিনীর জওয়ানরাও। তবে অন্ধকার নামায় একটু থমকেছে কাজ, কিন্তু থামেনি। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকা নদী, পুরু কাদাস্তর জমে যাওয়া ভাঙা রাস্তাঘাট, সব পেরিয়েই চলছে উদ্ধারকাজ। তিস্তাপাড় সংলগ্ন এলাকার কৃষিজমিগুলিতে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের তরফে মাইকিং করে সতর্কতার প্রচার চলছে। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে, রাতে তিস্তা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হতে পারে। তাই তিস্তা নদীর আশপাশের এলাকার কৃষিজমি অঞ্চলে থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

Continues below advertisement

জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া করলা নদীর জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। আজ রাতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তেমনটা হলে করলা নদীর জল জলপাইগুড়ি শহরের ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। রাত হওয়ার ফলে উদ্ধারকাজের গতি কিছুটা ধীরে হয়ে গেলেও প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, আজ সারারাত ধরেই চলবে উদ্ধারকাজ। আটকে থাকা মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। জোরকদমে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে একাধিক উদ্ধারকারী দল। উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে। আজ রাতে ফের বৃষ্টি হলে, ফুঁসতে থাকা এইসব নদীর জলের তোড়ে যে আশপাশের অঞ্চল ভেসে যাবে, তা বোঝাই যাচ্ছে। 

কোচবিহারে গতকাল রাত থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। তারপর আর বৃষ্টি হয়নি। বিকেলের পর আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছিল। তবে মেঘমুক্ত আকাশ দেখা গেলেও রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে কোচবিহারের অনেক জায়গাতেই প্রচুর জল জমেছে। অন্যদিকে আজ রাতে ফের বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। তোর্সা নদীর জল দুপুর থেকেই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। বিপদসীমার প্রায় কাছাকাছি দিয়ে বইছে এই নদী। হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে তোর্সা নদী সংলগ্ন এলাকায়। এছাড়াও মাথাভাঙার মানসাই নদীতে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। মাথাভাঙার কেদারহাটে জলঢাকা নদীতে বাধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। জলমগ্ন এলাকা থেকে প্রচুর মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Continues below advertisement

মাথাভাঙা ২ নম্বর ব্লকের ফুলবাড়ি এলাকায় ডুডুয়া নদীতেও বেড়েছে জলস্তর। নদীর চরে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোচবিহারের একাধিক জায়গায় নদীর জলস্তর বেড়েছে। তাই নদী সংলগ্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিরাপদে স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দুর্গতদের জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন জেলাশাসকরা। আজ রাতে ফের বৃষ্টি হলে বড়সড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোচবিহারের কালজানি নদীতে ভেসে যাচ্ছিলেন একজন। তাঁকে কোনওমতে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রাত বেড়েছে, অন্ধকার পরিবেশে উদ্ধারকাজ কিছু জায়গায় খানিকক্ষণের জন্য বন্ধ রাখলেও রাতভর উদ্ধারকাজ চালানো হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে উদ্ধারকারীদের পক্ষ থেকে।