কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি, শুভেন্দু ভট্টাচার্য ও রাজা চট্টোপাধ্যায় : তীব্র গরমে কার্যত হাঁসফাঁস অবস্থা দক্ষিণবঙ্গের। ঠিক উল্টো চেহারা নিয়ে উত্তরবঙ্গ। বর্ষাও এখনও সেভাবে শুরুই হয়নি, কিন্তু তার আগেই পাহাড়ে টানা ভারী বৃষ্টিতে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গ। একে তো কালিম্পং, সিকিম ও ভুটানে ভারী বৃষ্টিপাত, তার সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে গজলডোবা ব্যারেজের জল ছাড়া। দুইয়ে মিলে কার্য ফুঁসছে তিস্তা। শুধু তিস্তা-ই নয়, একসঙ্গে তোর্সা, জলঢাকা, রায়না সহ একাধিক নদীও ভয়াবহ আকার নেওয়ার জায়গায় দাঁড়িয়ে।


পাহাড়ে ভারী বৃষ্টির জেরে জল ঢুকতে শুরু করেছে ডুয়ার্সের বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের টোটগাও গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে। তিস্তার জল ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে মালবাজারের ক্রান্তি ব্লকের চ্য়াংমারি ও ডাপাডাঙার বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের। গত ২৪ ঘণ্টায় তুফানগঞ্জে ১১৮ মিলিমিটার, কোচবিহারে ৬২ মিলিমিটার ও মাথাভাঙায় ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত তিস্তা নদীতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মেরামতির জন্য় আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কালিম্পংয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক।


কী পরিস্থিতি কোচবিহার ?


কোচবিহার শহর সংলগ্ন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন। এখানে তোর্সা নদী ইতিমধ্যে ফুলেফেঁপে উঠেছে। এখানে যাতায়াতের জন্য থাকা সাঁতো ইতিমধ্যে ভেঙে গিয়েছে। পাহাড়ে টানা কয়েকদিন ধরে যে বৃষ্টি চলছে তার জেরে কোচবিহার তোর্সা-সহ একাধিক নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত বিপদসীমার নীচেই জল রয়েছে। কোচবিহার হলদিবাড়ি মেখলিগঞ্জে যে তিস্তা নদী আছে, সেখানে ইতিমধ্যে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মাথাভাঙা পর্যন্ত জলঢাকা নদীতেও হলুদ সতর্কতা জারি রয়েছে। পাহাড়ে দু'-তিনদিনের বৃষ্টিতে তোর্সা নদী একেবারে ফুলেফেঁপে উঠেছে। আশপাশে যে বাঁধ রয়েছে সেখানেও ভাঙন শুরু হয়ে গিয়েছে। আতঙ্কিত এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশাসনের তরফে সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এদিকে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে কোচবিহারে। বর্ষা এখনও ভাল করে শুরু হয়নি, তারমধ্যেই নদীগুলির এই চেহারা নিয়েছে, তাতে আগামী দিনে কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন নদী সংলগ্ন এলাকার মানুষজন।


কী পরিস্থিতি জলপাইগুড়িতে ?


সিকিম ও ভুটানে লাগাতার বৃষ্টি চলছে। তার জেরেই তিস্তা নদী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। আজও জলপাইগুড়ি জেলাজুড়ে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। এখনও বৃষ্টি কিছুটা কমলেও, আগামী ২৪ গণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তিস্তা নদীতে মূলত মৎস্যজীবীদের নামতে বারণ করা হয়েছে। এই পরস্থিতিতে তিস্তার পাড়ে সমস্ত নৌকা বেঁধে রাখা হয়েছে। এদিকে গজলডোবা ব্যারেজ থেকে আজ সকালে ১৫৫০.৫৬ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যার জেরে ফুঁসছে তিস্তা। মালবাজার ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকছে। তিস্তা ব্যারেজ থেকে ২০টি লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। তার জেরেই তিস্তা ফুলেফেঁপে উঠছে। লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরাকাটা ব্লকও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। প্রশাসনের তরফে তৎপরতা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণশিবির খুলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা, আজ রাতে যদি ভারী বৃষ্টি হয়ে তিস্তা ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।