সুদীপ চক্রবর্তী, ইসলামপুর : পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Vote) আগে আরও প্রকট হল উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ব্লক তৃণমূলের অন্দরের দ্বন্দ্ব। এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে খুনের অভিযোগে ব্লক তৃণমূল সভাপতি জাকির হোসেনকে (Jakir Hossain) গ্রেফতারের দাবিতে মিছিল করলেন বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীর অনুগামীরা। অন্যদিকে, জাকির হোসেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল। ঘটনায় তৃণমূলকে নিশানা করতে ছাড়েনি বিজেপি।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা খুনের অভিযোগ নিয়ে সপ্তমে সুর চড়িয়েছিলেন তৃণমূলেরই বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, "মমতার ব্যানার্জির রাজ্য, এখানে আইনের শাসন আছে। এখানে কোনও খাতির নেই যে আমাদের দলের লোক। সেই আইনের রাজ্যের মধ্যে কী করে একজন খুনের আসামি আইনের ঘেরাটোপের মধ্যে ঢুকে ইসলামপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে চলে গেলেন।" এবার অভিযুক্ত ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতারের দাবিতে পথেও নামলেন বিধায়কের অনুগামীরা। যার জেরে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ইসলামপুরে আরও প্রকট হল তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব।
৮ মার্চ ইসলামপুর ব্লকের দক্ষিণ মাটিকুণ্ডা গ্রামে খুন হন সিভিক ভলান্টিয়ার মহম্মদ সাকিব। মাটিকুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মেহেবুব আলমের গুলিতে তিনি খুন হন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জাকির হোসেনের নির্দেশে এই খুনের ঘটনা ঘটেছিল বলেও অভিযোগ। মৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের দাদা সাহানাওয়াজ আলম বলেন, "আমার ভাইকে গত মাসের ৮ তারিখে এই মাটিকুণ্ডায় মেহবুব আলম গুলি করে মারে। যার নির্দেশে হয়েছে তিনি জাকির হোসেন।"
এই ঘটনায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জাকির হোসেন সহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের দাদা। বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হলেও তৃণমূলেক ব্লক সভাপতি জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অভিযোগ ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের অঞ্চল কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। তাঁর পাশে ছিলেন জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়ালের অনুগামী এবং যুব তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কোশিক গুণ সহ অন্য় নেতারা।
এরপরেই মঙ্গলবার ব্লক সভাপতি জাকির হোসেনকে গ্রেফতারের দাবিতে মিছিল করেন মৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের দাদা ও তৃণমূল নেতা সাহানাওয়াজ আলম। মিছিলে ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরীর অনুগামীরাও।
আব্দুল করিম চৌধুরী বলেন, "খুব আশ্চর্যের ব্যাপার, পুলিশ জানে না। এরকম কী আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ ঘুমোচ্ছে। এরকম কী আমাদের পুলিশ ঘুমোচ্ছে। পুলিশ মমতা ব্যানার্জির হাতে। তাহলে মমতা ব্যানার্জি কেমন করে বলবেন যে আমার দাবিটা সত্যি থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবিটা সারা ভারতে টিকবে কীভাবে।"
যদিও, অভিযুক্ত ব্লক সভাপতির পাশে দাঁড়িয়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার তৃণমূল সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল। তিনি বলেন,
কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারে। অভিযোগ করলেই তাকে গ্রেফতার করতে হবে এর কোনও কারণ নেই। পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলেই তবে তাকে গ্রেফতার করে।
এনিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। উত্তর দিনাজপুর বিজেপির সহ সভাপতি সুরজিৎ সেন বলেন, বাংলায় কথা আছে না পিপিলিকার পাখনা গজায় মরিবার তরে। মৃত্যুর কালে ওরা একবার বাঁচার চেষ্টা করছে। এরপর তো তৃণমূলকে মানুষে ভোট দেবে না। যদি ক্ষমতায় আসা যায় তাহলে করে খাওয়া যাবে। তারই লড়াই চলছে তৃণমূলে।
দলেরই ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতারের দাবিতে বিধায়কের অনুগামীদের মিছিলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলায়।