সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: রায়গঞ্জে পুজো কার্নিভাল (Durga Puja Carnival) চলাকালীন গরুর গাড়ি ফেলে ছুটল বলদ। উন্মত্ত বলদের গুঁতোয় মৃত্যু হল ১ জনের। ঘটনায় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মৃতের মেয়ে। অভিযুক্ত অনুশীলনী ক্লাবের সম্পাদক ও সভাপতিকে গ্রেফতারির দাবিতে রাস্তায় মৃতদেহ রেখে অবরোধ করেন স্থানীয়রা।


রায়গঞ্জের পুজো কার্নিভালে বিপত্তি, বলদের তাণ্ডবে মৃত ১


জলপাইগুড়ির মালবাজারে বিসর্জন-বিপর্যয়ে আট জনের মৃত্যুর পরেও ফেরেনি হুঁশ। উন্মত্ত বলদকে কার্নিভালে নামনোর অভিযোগ উঠল প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাতে আট জন আহত হলেন। মারা গেলেন এক ব্যক্তি।


শুক্রবার, উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinajpur News) রায়গঞ্জে (Raiganj News) দুর্গা কার্নিভালের আয়োজন করা হয়। সেখানে, বলদে টানা গাড়িতে প্রতিমা নিয়ে অংশ স্থানীয় অনুশীলনী ক্লাব। শুরুর দিকে সমস্যা না হলেও, কার্নিভাল চলাকালীন আচমকা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে একটি বলদ। ভিড় দেখে আচমকা ছুটে পালানোর চেষ্টা করে একটি বলদ। হুড়োহুড়িতে পড়ে যান বেশ কয়েক জন। বলদটিকে বাগে আনার চেষ্টা করতে গেলে প্রথমে সজোরে লাথি ছোড়ে সে। তার পর মোহনবাটি এলাকায় দড়ি ছিঁড়ে শিলিগুড়ি মোড়ের দিকে ছুট দেয়। 


বলদটির শিংয়ের গুঁতোয় আহত হন বেশ কয়েকজন। নিচে পড়ে যায় প্রতিমা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আধিকারিকরা। সেখান থেকে ১০০ মিটার দূরে এই ঘটনা ঘটে। কিন্তু তার পরও আহতদের সাহায্য়ার্থে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। আহতদের রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর, রাতে সাধন কর্মকার নামে বছর ৬৫-র এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।


আরও পড়ুন: ‘শোকবিহ্বল ‘মাননীয়া আমি সেই লোকটা...বন্ধ রাখো কার্নিভাল’, মমতার উদ্দেশে লিখলেন কবীর সুমন


খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে, হাসপাতালে যান উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক ও রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার এসপি। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দ মিনা বলেন, "প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। ঘটনার তদন্ত হবে।"


কিন্তু এই ঘটনায় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মৃতের মেয়ে জুলি কর্মকার। তিনি বলেন, "দেখলাম সবাই দাঁড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে বলছে গরু গরু আসছে। সেই গরু ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়, পরে শুনলাম এটা অনুশীলনী ক্লাবের গরু ছিল। যে যে ভাবে পারছে, নিজের প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে। একটা গরু চলে গেল। আরেকটি গরু সেই ভাবে দৌড় মারছে। লোকে বলছে আমাদের ক্লাবের প্রেসিডেন্টকে মেরে দিয়েছে। আমি বললাম বাবাকে মেরেছে? কোথায় গেল? আমার বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এই যে সামান্য একটা অনুষ্ঠানের জন্য আজকে একটা প্রাণ চলে গেল, এই প্রাণ তো আর ফিরে পাব না। আমি তো আর আমার বাবাকে ফিরে পাব না। এটার জন্য কে দায়ী? এটার জন্য দায়ী ক্লাব, দায়ী প্রশাসন। বন্য পশু নিয়ে আসবে কেন?"


শনিবার, অভিযুক্ত অনুশীলনী ক্লাবের সম্পাদক ও সভাপতিকে গ্রেফতারির দাবিতে রাস্তায় মৃতদেহ রেখে অবরোধ করেন স্থানীয়রা। তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, "কার্নিভাল ভাল অনুষ্ঠান। কিন্তু সতর্ক হলে ভাল হত। প্রশাসনের সতর্ক থাকা উচিত ছিল।"


প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে


দ্বাদশীর রাতে রায়গঞ্জের এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে দশমীর রাতে মালবাজারের বিসর্জনে বিপর্যয়ের কথা। মালবাজারে বিসর্জন-বিপর্যয়ের পরেও কার্নিভাল নিয়ে কেন সতর্ক হল না প্রশাসন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।