সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ : বইয়ের পরিবর্তে হাতে আজ মোবাইল ! মুঠোবন্দি ফোনেই গোটা বিশ্বের তথ্য। ডিজিটাল যুগে তাই দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাস । সেকথা যথার্থই অনুধাবন করেছেন রায়গঞ্জের বীরনগরের যুবক প্রসেনজিৎ কুমার সরকার। তাই বই পড়ার অভ্যাস উস্কে দিতে গুনে গুনে ২০০টি বই কিনে তার ওপর আমন্ত্রণপত্র সেঁটে বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন বিয়ের কার্ড। বিয়ের কার্ড খুলতেই ভেতরে দেখা মিলছে আস্ত গল্পের বই-এর। বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটিয়ে জনসাধারণকে কার্যত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রসেনজিৎ। নিজের বিয়ের বিশেষ মুহূর্তটি স্মরণীয় করে রাখতে আমন্ত্রণপত্রের ভেতরে উপহার দিচ্ছেন গল্পের বই ।
বাবা প্রদীপ কুমার সরকার এবং মা স্বপ্না সরকার (দে)-র একমাত্র ছেলে পেশায় চাকরিজীবী এই যুবক নিজের বিয়ের কার্ডের মোড়কে আমন্ত্রিতদের হাতে তুলে দিচ্ছেন গল্পের বই। বই আমাদের সকলের কাছের বন্ধু, কিন্তু এই আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কোথাও যেনও হারিয়ে যেতে বসেছে সাধারণের বই পড়ার অভ্যেস। ঠিক এই ভাবনাকে সামনে রেখেই প্রসেনজিৎবাবু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের বিয়ের কার্ডের ভেতরে একটি গল্পের বই সকলকে তুলে দেওয়ার। বই পড়ার অভ্যেস যেমন সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, ঠিক তেমনই সাধারণ মানুষের বই না পড়ার ফলে সেরকম ব্যবসা হয় না বই বিক্রেতাদের, তাই এই সব দিকে নজর দিয়ে প্রায় ২০০টি বই কিনেছেন তিনি। পুরনো এই বই পড়ার অভ্যেস ফিরে আসুক নতুন প্রজন্মের মধ্যেও, এই বার্তাই তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি।
চিঠির প্রেরক তথা প্রসেনজিৎবাবুর জ্যাঠামশাই অশোক সরকার জানান, নতুন প্রজন্মকে বইমুখী করা, ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি পুরনো দিনের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। এমনকী যাঁরা এই আমন্ত্রণপত্র পাচ্ছেন, তাঁরাও এই অভিনবত্বকে সাদরে গ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি বিয়ের কার্ড একটা সময় পরে মানুষ ফেলে দেন। কিন্তু বই-সহ বিয়ের কার্ড মানুষের ঘরে ঠাঁই পাবে। বইটি মানুষ যেদিনই পড়ার জন্য হাতে তুলবেন, সেদিনই সরকার বাড়ির ছেলের বিয়ে-র স্মৃতি রোমন্থন করবেন আমন্ত্রিতরা, তাই এই অভিনবত্ব বলে জানালেন প্রসেনজিতের মা স্বপ্না সরকার (দে)।
আধুনিক প্রজন্মের যুবক তথা প্রসেনজিতের বন্ধু দেবার্ঘ্য দত্ত বন্ধুর আমন্ত্রণ জানানোর পদ্ধতিতে রীতিমতো আপ্লুত। তাঁর কথায়, এর ফলে নতুন প্রজন্মের কিছু মানুষের মধ্যে অন্তত বই পড়ার উৎসাহ গড়ে উঠবে বলে আশাবাদী তিনি।
তবে, রায়গঞ্জের মতো মডেল শহরে এজাতীয় উদ্যোগ যে ইতিমধ্যেই সকলের হৃদয়ে নজর কেড়েছে, তা আমন্ত্রিত মানুষ থেকে শুরু করে শ্রোতারাও একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন।