সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: উত্তর দিনাজপুরে অনগ্রসর শ্রেণিভুক্তদের স্কলারশিপ দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ দিলেন জেলাশাসক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, অভিযুক্তরা তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকায় তাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। লাগাতার অভিযোগের পর অবশেষে পদক্ষেপ করেছে জেলা প্রশাসন। উত্তর দিনাজপুরে অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত পড়ুয়াদের স্কলারশিপের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। 


কী ঘটেছিল:
সম্প্রতি জাতি শংসাপত্রের তথ্য হাতিয়ে, অনগ্রসর সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ স্কলারশিপের বিপুল টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে করণদিঘিতে। রাজ্য সরকারের ওয়েসিস পোর্টাল ব্যবহার করে কীভাবে আবেদনকারীর নামে ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বানিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত নথিও প্রকাশ্যে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, করণদিঘির বিডিও এবং আইসি-র কাছে তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন। অভিযোগকারীদের একাংশের দাবি, স্কলারশিপ জালিয়াতির মূল চক্রী করণদিঘির সাবধান এলাকার বাসিন্দা মহতাবউদ্দিন। অভিযোগ, বিভিন্ন ব্যাঙ্কে নিজের একাধিক অ্যাকাউন্ট বানিয়ে অন্যদের জাতি শংসাপত্র ব্যবহার করে টাকা আত্মসাত্‍ করছেন তিনি। সেই কাজে মহতাবউদ্দিনকে সাহায্য করছে তার ৩ ভাই। তাদের নাম, হায়াত আলি, হুমায়ুন কবীর এবং সারজাহান আলি। দুটি বেসরকারি ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে মহতাবউদ্দিনের অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। 


কীভাবে চলছে জালিয়াতি?
করণদিঘির চৌনাগরা গ্রামের বাসিন্দা গীতা সিং বছর চারেক আগে পড়াশোনা ছেড়েছেন। তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সন্তানও রয়েছে। গত তিন বছর ধরে তাঁর নামে স্কলারশিপের টাকা তোলা হচ্ছে। স্কলারশিপের জন্য গীতা সিংহর নামে যে আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর উল্লেখ করা রয়েছে, তা মহতাবউদ্দিনেরই একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট!এভাবে যতজনের আবেদনপত্র জমা পড়েছে, প্রতিটিতেই মতহাতউদ্দিনেরই কোনও না কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উল্লেখ রয়েছে। একই ঘটনা মুন্সি সোরেনের আবেদনপত্রেও হয়েছে। করণদিঘির বাসিন্দা এক অভিযোগকারী রুস্তম আলি বলেন, 'অভিযুক্তরা তৃণমূল করে। তাই পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ডিএম সাহেবকে কমপ্লেন করেছি।'


বিজেপির আক্রমণ:
স্কলারশিপ দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূলের নাম উঠে আসতেই কটাক্ষ ছুড়েছে বিজেপি। উত্তর দিনাজপুর জেলার বিজেপি সভাপতি বাসুদেব সরকার বলেন, 'তৃণমূল চলছে কাটমানিতে। নতুন সংযোজন স্কলারশিপের টাকা হাতিয়ে নেওয়া।' অভিযোগ অস্বীকার করে, করণদিঘি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব আলি বলেন, 'এরা তৃণমূলের কেউ না। পুলিশ, বিডিও-কে বলব দুষ্কর্ম যেই করুক, তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে।'


আরও পড়ুন: বিজেপির সাংসদ-বিধায়কের নাম ও ছবি দিয়ে 'নিখোঁজ' বলে ফ্লেক্স তৃণমূলের, থানায় মিসিং ডায়েরিও !