দীপ চক্রবর্তী ও বাচ্চু দাস, উত্তর দিনাজপুর: জলপাইগুড়ি, পূর্ব বর্ধমানের মতো ফের অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হল উত্তর দিনাজপুর। বেসরকারি অ্যামবুল্যান্সের দাবি মতো টাকার জোগাড় করতে না পেরে, মৃত সন্তানকে ব্যাগে ভরে বাড়ি ফিরলেন কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা। অমানবিক এই ঘটনা প্রত্যাশিত নয় বলে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে তৃণমূল। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর 'এগিয়ে বাংলা' মডেলকে বিঁধল বিজেপি।
ঘটনা নিয়ে শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর। ট্যুইটে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতা ট্যুইটারে লিখেছেন, অ্যামবুল্যান্স ভাড়ার টাকা না থাকায় একজন বাবাকে তাঁর ৫ মাসের শিশুসন্তানের মৃতদেহ ব্যাগে করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে কালিয়াগঞ্জে নিয়ে যেতে হল। কীসের জন্য স্বাস্থ্য সাথী? দুর্ভাগ্যবশত এটাই এগিয়ে বাংলা মডেল। এটাই রাজ্যের বাস্তব ছবি। ট্যুইটে রাজ্য সরকারকে নিশানা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
একরত্তি সন্তানকে সুস্থ করতে কোলে করে নিয়ে এসেছিলেন আরোগ্য নিকেতনে। শত চেষ্টা সত্ত্বেও চার মাসের সেই শিশুসন্তানকে ফেরাতে পারলেন না বাবা! রবিবার বাড়ি ফিরল তার নিথর দেহ। কিন্তু জুটল না একটা অ্যাম্বুল্যান্স! ছোট্ট শরীরটা তাই ব্যাগে ভরে বাড়ির পথে হাঁটা লাগালেন বাবা।
জলপাইগুড়ি, পূর্ব বর্ধমানের পর এবার উত্তর দিনাজপুর। ফিরল সেই অমানবিক ছবি!ফের একবার লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেল বাংলার। মৃত শিশুর বাবা অসীম দেবশর্মা বলছেন, শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ছেলে মারা যায়। মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়ি নিয়ে আসতে ৮ হাজার টাকা দাবি করে অ্যাম্বল্যান্স। না পেয়ে ব্যাগের মধ্যে জামাকাপড়ে মুড়িয়ে কালিয়াগঞ্জ অবধি আসি। সেখান থেকে বিজেপি কাউন্সিলরের জোগাড় করে দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়িতে নিয়ে আসি।
উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের এই মর্মান্তিক ঘটনা সামনে আসতেই শুরু শোরগোল। সূত্রের খবর, অসুস্থ সন্তানকে বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা। খাদ্যনালীতে সংক্রমণের কারণে শনিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় ৪ মাসের শিশুর।
অভিযোগ, রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে মৃত শিশুকে আনতে গেলে মেলেনি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। জোগাড় করতে পারেননি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দাবি করা ৮ হাজার টাকা। শেষমেশ জামাকাপড় ভর্তি ব্যাগে সন্তানকে ভরে বাড়ির পথে রওনা হন বাবা। শিলিগুড়ি থেকে বাসে কালিয়াগঞ্জে ফেরার পর শেষপর্যন্ত স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলরের সহায়তায় অ্যাম্বুল্যান্সে ঠাঁই পায় শিশু-সহ ব্যাগটি।
এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা তুলে ধরে ট্যুইটে রাজ্যের শাসক দলকে খোঁচা দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক লেখেন, দুর্ভাগ্যবশত এটাই 'এগিয়ে বাংলা'র প্রকৃত রূপ!
কালিয়াগঞ্জ পুরসভা বিজেপি নেতা ও কাউন্সিলর গৌরাঙ্গ দাস বলছেন, গরিব মানুষের কাছে টাকা না থাকলে এই সরকারের আমলে এই হাল হবে।
উত্তর দিনাজপুরে কালিয়াগঞ্জের তৃণমূল ব্লক সভাপতি নিতাই বৈশ্যের সাফাই, মিডিয়ার থেকে প্রথম এই খবর শুনলাম। বিষয়টি অমানবিক। সরকারি রোগী সহায়তা কেন্দ্র আছে। উনি গ্রামের মানুষ হওয়ায় সঠিক জায়গায় পৌঁছতে পারেননি। তবে যাই হোক না কেন, অমানবিক হয়েছে।
ঘটনার পিছনে কার গাফিলতি, তদন্ত করে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত জানান, এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে উনি নিশ্চয়ই আমাদের এখানে যোগাযোগ করেননি। তাহলে একটা ব্যবস্থা হয়ত করা যেত। তবে বেসরকারি অ্য়াম্বুল্যান্সের তো নির্দিষ্ট রেট চার্ট থাকে। তা সত্ত্বেও কেন এত টাকা চেয়েছে, খতিয়ে দেখা হবে।
এর আগে, ২০ এপ্রিল, অ্য়াম্বুল্যান্সের টাকার সংস্থান না করতে পেরে ট্রেনে করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই মৃত্যু হয় বর্ধমানের বাসিন্দা মেনকা কোড়ার। তার প্রায় সাড়ে ৩ মাস আগে, বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় কাঁধে করে মায়ের মৃতদেহ কাঁধে করে নিয়ে ফিরতে হয় জলপাইগুড়ির বাসিন্দাকে। এই দুই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এক মর্মান্তিক ছবি উঠে এল উত্তর দিনাজপুরে। কেন বারবার একই ঘটনা ঘটছে বাংলায়? কবে বদলাবে এই অমানবিক ছবি?