সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: দিল্লির শাস্ত্রী পার্ক নিগমে অগ্নিদদ্ধ হয়ে পরিযায়ী শ্রমিক পশিরুল নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরই মমতা বন্দোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ২ লক্ষ টাকা ঘোষণা করায় ক্ষোভে ফুঁসছে ইসলামপুর থানার জাগিরবস্তি গ্রাম। ঠিক কী হয়েছিল দিনাজপুরে ? 'রাজ্য সরকারের এই পক্ষপাতিত্ব আচরণে' তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতাদের একাংশও ক্ষুব্ধ। কেন এই অভিযোগ?


কী অভিযোগ বিজেপি নেতার ?


তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের ক্ষোভে বেশ খানিকটায় অস্বস্তিতে পরেছেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের পথে হাটলেন জেলা সভাপতি। 'ইসলামপুর তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীর কাছ থেকে সংখ্যালঘুদের সরিয়ে আনতেই জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের অনুগামী পশিরুলের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ঘোষনা করেছে রাজ্য সরকার' বলে অভিযোগ বিজেপি নেতা সুরজিৎ সেনের।


ঠিক কী হয়েছিল ?


১২ জানুয়ারি উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর থানার জাগিরবস্তির বাসিন্দা মহম্মদ করিম নামের এক ব্যক্তি সহ গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাষ্ট করে চার সন্তান সহ পরিবারের ছয় সদস্যের মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনার পর মৃতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তাদের ইসলামপুরের জাগিরবস্তির বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানী, তৃনমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল, ইসলামপুর বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী সহ ব্লক স্তরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। এছাড়াও মহকুমা প্রশাসনের কর্তারাও। মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন মন্ত্রী সহ তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা। দীর্ঘ দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও মৃতের পরিবার সরকারি কোন সাহায্য পাননি।


অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিপূরণে 'পক্ষপাতিত্ব'-র অভিযোগ 


সম্প্রতি দিল্লির শাস্ত্রী পার্কে অগ্নিকান্ডে উত্তর দিনাজপুর জেলারই ইসলামপুর ব্লকের সুজালির বাসিন্দা পশিরুল সহ ছয় জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে এই সংবাদ পৌঁছাতেই মৃতদের পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন। পশিরুলের পরিবার দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও জাগিরবস্তির মহম্মদ করিমের পরিবার ক্ষতিপূরণ কেন পাবেন না ? তা নিয়ে প্রশ্ন শাসক দলের নেতা জাভেদ আখতারের। জাভেদবাবুর অভিযোগ,  ঘটনার পর মন্ত্রী গোলাম রব্বানী সহ সমস্ত জেলা নেতারা এসে সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত করিমের পরিবারকে কোন সরকারি সাহায্য দেওয়া হয়নি। দুই মাস কেটে যাবার পরও কোন নেতাই এখন আব্দুলের পরিবারের খোঁজ রাখেন না।  সুজালির বাসিন্দা পশিরুলের পরিবার দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে জাগিরবস্তির মানুষ।  


'সংখ্যালঘুদের মন জয় করতেই ক্ষতিপূরণ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর'


ইসলামপুর ব্লকে দুটি ঘটনা হলেও একটিতে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।অন্যটিতে ক্ষতিপূরণ দেয়নি। গ্রামের মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাইসাল গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য কাইজার মহম্মদের। বিরোধী দল বিজেপি নেতা সুরজিৎ সেনের অভিযোগ,  'সাগরদিঘি উপনির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেস দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী। সংখ্যালঘুদের মনজয় করতেই ঘটনার একদিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। এই ঘটনার থেকেও আরো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল জাগিরবস্তি। একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হলেও আজ পর্যন্ত  মুখ্যমন্ত্রী তাদের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেননি।' জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল জানিয়েছেন, 'পশিরুলের পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হলেও কেন মহম্মদ করিমের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেলেন না তা তিনি জানেন না। যারা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছে তাঁরা কেন আগে এগিয়ে আসেননি ?' প্রশ্ন কানাইয়ালালের।