সুনীত হালদার, হাওড়া: শুক্রবারই মোবাইল চোর সন্দেহে ইরশাদ আলম নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারে  কলকাতার একটি সরকারি ছাত্রাবাসের ছাত্ররা। বছর দশেক আগে ২০১৪ সালে একইভাবে এন আর এস মেডিকেল কলেজের (NRS Medical college) ছাত্রাবাসে মোবাইল চোর সন্দেহে কোরপান শাহ নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরেছিল মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। 


দশ বছর ধরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেলেও আজও বিচার পায়নি কোরপান শাহের পরিবার। পয়সার অভাবে মামলা করতে না পারায় তিনি বিচার থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন।


বছর দশেক আগে কলকাতার এন আর এস মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন কোরপান শাহ নামে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। 


তাঁকে মোবাইল চোর সন্দেহে হোস্টেলের মধ্যে পিলারে দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে ছাত্ররা তাঁকে বেধড়ক পেটায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর কোরপান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাঁর পরিবারের লোক জানিয়েছেন আগে তিনি জরির কাজ করলেও এক দুর্ঘটনার পর তাঁর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যায়। 


এরপর থেকে হঠাৎ দিন কয়েকের জন্য তিনি বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যেতেন। বাড়িতে স্ত্রী সেই সময় গর্ভবতী ছিলেন। এছাড়াও তাঁর আরও চার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ছিল। স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুতে অথৈ জলে পড়েন স্ত্রী আনজিরা বেগম। প্রথমদিকে রাজনৈতিক নেতারা সামান্য কিছু টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করলেও কিছুদিনের মধ্যেই সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কেউ আর তেমন খোঁজখবর করত না। এরপর আরজিনা বেগম ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সংসার চালানোর জন্য বাজারে সবজি বিক্রির পাশাপাশি পরিচারিকার কাজ শুরু করেন।


আক্ষেপ করে তিনি বলেন, তাঁর স্বামীর মৃত্যুতে কোনও বিচার পাননি। তাঁর স্বামীকে অপরাধীরা একইভাবে চোর সন্দেহ পিটিয়ে মেরে ফেলে। তারা যদি পিটিয়ে না মেরে সরাসরি পুলিশের হাতে তুলে দিত তাহলে তাঁর সন্তানরা অনাথ হয়ে যেত না। যাকে গতকাল মেরে ফেলা হল তাঁর সন্তানেরাও একইভাবে তঁর বাবাকে হারাল। ছাত্রাবাসের পড়ুয়াদের উচিত ছিল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া। কোরপান শাহের ছেলে আজাহারউদ্দিন শাহ বলেন, বাবাকে হারিয়ে তারা কষ্টে আছেন। এখন তিন ভাই, দুই বোন এবং মাকে নিয়ে কোনরকমে সংসার চলছে। বাবার মৃত্যুর বিচার এবং কোনও সরকারি সহযোগিতা পাননি।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।