পার্থপ্রতিম ঘোষ ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা : তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান (TMC MP Nusrat Jahan) এবং বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য়প্রমাণ পাওয়া গেছে। আলিপুর আদালতের নির্দেশে তদন্ত করে, আদালতে এমনই রিপোর্ট পেশ করেছিল কলকাতা পুলিশ। এবিপি আনন্দর হাতে এসেছে বিস্ফোরক সেই নথি।
'৩০০ শতাংশ বলতে পারি এবং চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, দুর্নীতির সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নই।' ফ্ল্য়াট নিয়ে প্রতারণার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূল সংসদ নুসরত জাহান এই দাবি করলেও, কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টই কিন্তু অন্য কথা বলছে। সেই বিস্ফোরক নথি এসেছে এবিপি আনন্দর হাতে ! রাজারহাটে জমি কিনে ফ্ল্যাট বানানোর জন্য 'সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড' নামে একটি সংস্থা ২০১৪-'১৫ সালে ৪২৯ জনের থেকে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে নেয়। কিন্তু, সেই ফ্ল্যাট তৈরি হয়নি। এই অভিযোগ নিয়ে আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হন অভিযোগকারীরা। তার প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২২শে ডিসেম্বর, কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি ক্রাইমকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেন, আলিপুর আদালতের ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাক আলম।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি, আদালতে জমা দেওয়া, গড়িয়াহাট থানার তদন্তকারী অফিসারের রিপোর্টে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। কলকাতা পুলিশের দেওয়া এই রিপোর্টে অভিযুক্ত হিসাবে নাম রয়েছে তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানের। এরপরই, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ এবং সম্মিলিত অপরাধের ধারায় মামলা হয় এবং আদালতে তরফে সমন জারি করা হয়।
অভিযোগকারী সুশান্তকুমার হাজরা বলেন, 'সবাই বেল নিয়েছেন। কিন্তু, নুসরত জাহান আসেননি। শুনলাম, আলিপুর ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে গিয়ে স্টে নিয়েছেন।' যদিও সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর রাকেশ সিংহর বক্তব্য, 'আপনি বলছেন আমি প্রতারিত হয়েছি। কিন্তু, আমার কাছে সম্পত্তিটা আমি হোল্ড করে বসে আছি। তাহলে আমি প্রতারিত হলাম কখন ? কে করল প্রতারণা ? এটা তো লজিক।'
'প্রতারণার' শিকার হয়ে প্রথমে থানায় যান ক্রেতারা। অভিযোগ, সেখানে সুরাহা না হওয়ায় ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হন তাঁরা।
কিন্তু, সেখান থেকেও কোনও পদক্ষেপ না করায় আলিপুর আদালতে মামলা করা হয়। অভিযোগকারীদের আইনজীবী কমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'একটা এফআইআর দাখিল করলাম কোর্টের কাছে। কারণ, গড়িয়াহাট থানা প্রথমে এফআইআর নেয়নি। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হল। সবথেকে বড় কথা, গড়িয়াহাট থানা তদন্ত করে রিপোর্ট জমা করেছিল । রিপোর্টে দোষ পাওয়া গেছে। তাহলে, গড়িয়াহাট থানার ওঁকে গ্রেফতার করা উচিত ছিল। সেটা না করে ওরা অবহেলা দেখিয়েছে।'
আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলছেন, 'প্রাথমিক অনুসন্ধানে এটা উঠে আসে যে ওদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটা প্রাথমিকভাবে সত্য। তাই, সেই রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পরে আদালত ওদের বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করে ২০৪ সিআরপিসি-তে। এই ঘটনায় কিছুটা হলেও সত্যতা আছে বলে আদালত মনে করেছে।'
এবার এই অভিযোগকারীদের নিয়ে ইডি-র দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। এরপর এই মামলার ভবিষ্যৎ কী ? সেদিকে নজর সকলের।