কলকাতা: বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা (Coromandel Express Accident), কান্নার রোল বাংলায়। রাজ্য সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের ৩১জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৫৪৪ জন।
কান্নার রোল বাংলায়: মৃতদের মধ্যে বারুইপুর পুলিশ জেলার ৮জন, পূর্ব বর্ধমানের ৬ জন। সুন্দরবন পুলিশ জেলার ৩জন রয়েছেন। জলপাইগুড়ি, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, হাওড়া পুলিশ জেলা, পূর্ব মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া গ্রামীণ জেলা, ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার একজন করে বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায়। মৃতদের মধ্যে জঙ্গিপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরেরও ২ জন করে রয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় সারা রাজ্যে আহত হয়েছেন ৫৪৪জন। পূর্ব মেদিনীপুরে আহতের সংখ্যা সবথেকে বেশি ৯৯জন। পূর্ব বর্ধমানে আহতের সংখ্যা ৮৯। পশ্চিম মেদিনীপুরে আহত হয়েছে ৭৩জন।
গত একদশকে একসঙ্গে এত মৃত্য়ু দেখেনি কেউ। পড়শি রাজ্যে দুর্ঘটনা হলেও, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দার মৃতের সংখ্য়াটাও বহু। শনিবার সন্ধে পর্যন্ত রাজ্য সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদেরই একজন, হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা পিনাকী মণ্ডল। পায়ের ব্যথাটা বেশকিছুদিন ধরেই ভোগাচ্ছিল। ভেবেছিলেন, একবার কটকে ডাক্তার দেখিয়ে আসবেন। ৮ বছরের ছেলে নিয়ে ভেলোরে চিকিৎসা করিয়ে ফিরছিলেন পুরুলিয়ার হুড়া থানা এলাকার অর্চনা পাল। পরিবার বলছে, অর্চনা এখন হাসপাতালে, খোঁজ নেই ৮ বছরের ছেলে ও দাদার। এদিকে আবার প্রাণ হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ইছাপুরের বাপুজি কলোনির বাসিন্দা সহেলি দে দত্ত। স্বামী চেন্নাইয়ে থাকেন, সহেলিও সেখানেই বিএড করেন। শুক্রবার যখন তাঁদের ট্রেন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ল...তারপর বেশ কিছুক্ষণ ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।
হাবড়ার হিজলপুকুরের বাসিন্দা তনয়া পাল, পেশায় অধ্যাপক। পাশাপাশি আর্কিটেকচারে পিএইচডি করেন বিজয়ওয়াড়ায়। শুক্রবার সেখানের উদ্দেশেই খড়গপুর থেকে রওনা হয়েছিল। সঙ্গে ছিল ৭ বছরের ছেলে, ১ বছর ৭ মাসের মেয়ে, বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়ি। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে আপার বার্থ থেকে ছিটকে পড়ে তনয়ার ছেলে। কমবেশি আঘাত লাগলেও তাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন। দিনহাটার নিগমনগরের বাসিন্দা শিবা রায় ও নব্যেন্দু গোস্বামী। ২২ শ্রাবণ শিবার বিয়ে। বিয়ের কেনাকাটা সারতে বন্ধু নব্যেন্দুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন শিবা। ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত। নব্যেন্দু কটকের হাসপাতালে ভর্তি, খোঁজ মিলছে না শিবার। উৎকণ্ঠার একই ছবি দিনহাটারই মহেশ্বরে। স্ত্রী ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক জিশান আলম বেঙ্গালুরু থেকে ফিরছিলেন বাড়িতে। শুক্রবারের দুর্ঘটনার পর একদিন কেটে গেলেও খোঁজ নেই তাঁর। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে মৃত্যু হয়েছে হাওড়ার ৩ বাসিন্দারও, তার মধ্য়ে রয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের প্যান্ট্রিকারের এক কর্মী। পূর্ব বর্ধমানের বড়শূলের বাসিন্দা সফিক কাজি।শুক্রবার দুপুর ৩টেয় তাঁর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছিলেন স্ত্রী। শনিবার দুপুর গড়ানোর আগেই বাড়িতে এসেছে তাঁর মৃত্যু সংবাদ।
এদিন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পাশে দাঁড়িয়ে রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন মমতা বলেন, "আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র (Anti Collison Device) তৈরি করেছিলাম। গোয়ায় গিয়ে সব ব্যবস্থা হয়েছিল। তার পর থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছিল। এটি এমন একটি যন্ত্র, যা ট্রেনে বসানো থাকলে, এক লাইনে যদি দু'টি ট্রেন এসে পড়ে, বা সামনে কিছু পড়ে থাকে, আপনা থেকেই থেমে যাবে ট্রেন। কিছু গড়বড় দেখলে সতর্কবার্তা যাবে।"
আরও পড়ুন: Skin Care Tips: জিমে গিয়ে শরীরচর্চার পাশাপাশি খেয়াল রাখুন ত্বকেরও, কোন কোন বিষয় নজরে রাখবেন?