কলকাতা: ফের রাজ্য় ও রাজ্যপাল (Governor) সংঘাত। এর আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বারবার রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাত সামনে এসেছে। এবার রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (University) আচার্য পদ থেকেই রাজ্যপালকে সরিয়ে সেই জায়গায় মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাশ হয়েছে। যা নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। 


বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে রাজ্যে বিরোধী দলগুলি। সমালোচনা বেশ কিছু শিক্ষাবিদের গলাতেও। আবার উল্টোদিকে হেঁটে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ। 


সিপিএমের কটাক্ষ:
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে কটাক্ষ করেছে সিপিএম (CPIM)। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'উপাচার্যরা আর কেন ওঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবেন?ওঁর মতো মনুষ ‌যিনি নিরলস সাহিত্য চর্চা করে সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন। তাঁরই তো থাকা উচিত রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার মাথায়। মুখ্যমন্ত্রীর মনে হয় কাজ কম পড়েছে। ওঁর সময়ের চাইতে কাজ কম পড়েছে। এটা গোটা বাংলার সমাজজীবন ও শিক্ষাজীবন কলুষিত করা ছাড়া আর কিছু মনে করি না। খুবই দুর্ভাগ্য।'


মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করতে চেয়ে বিধানসভায় বিল (Bill) আনছে সরকার। রাজ্যপাল অনুমতি না দিলে অর্ডিন্যান্স জারি করবে সরকার, খবর সূত্রের। এই নিয়েও খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি।


বিজেপির খোঁচা:
বিজেপি (BJP) নেতা শমীক ভট্টাচার্যের তোপ, 'শাসক দলের মালিকানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। ‌যিনিই শুরু তিনিই শেষ। সুতরাং সমস্ত ক্ষেত্রে তারই সিদ্ধান্ত তারই মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে তাই স্বাভাবিক। তবে আজ ‌যেরম নজিরবিহীন ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, এটা শুধুই মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা ‌যাতে বাকি সবাই সায় দিয়েছেন শুধু। আবার বলেছেন রাজ্যপাল অনুমতি না দিলে অর্ডিন্যান্স জারি করা হবে। আসলে এই মুহূর্তে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার ‌যে কঙ্কালসার চেহারা তৈরি হয়েছে, তা খানিকটা সামাল দিতেই এই সিদ্ধান্ত। আচা‌র্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করার প্রসঙ্গে বললেন শমীক ভট্টাচা‌র্য।' 


কী বলছেন শিক্ষাবিদরা?
এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে শিক্ষাবিদদের মধ্যে থেকে। শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, 'ভাল ভাবেই দেখছি বিষয়টিকে। এতদিন ধরে যিনি রয়েছেন পদে, সেই জগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankhar) জন্যই এমনটি হল। যেখানেই অবিজেপি সরকার রয়েছে, সেখানেই  এমনটা হচ্ছে।' শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হন তাহলে আরও সাহায্য করতে পারবেন। আবার উল্টোদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নিয়ন্ত্রণের ঘটনাও ঘটতে পারবেন। মন্ত্রিসভা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন তো আর নড়চড় হওয়ার উপায় নেই।' 
শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক প্রধান। তিনি অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। ইংরেজ আমল থেকে এই প্রথা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি (University) তাদের স্বাতন্ত্র্য হারাবে, শিক্ষায় স্বাতন্ত্র্য আর কিছু থাকবে না। এইভাবে শিক্ষায় (Education) রাজনীতির প্রত্যক্ষ অনুপ্রবেশ ঘটবে। তাতে শিক্ষার সর্বনাশ হবে।'  


আরও পড়ুন: ভূগোলে স্নাতকোত্তর-বিএড, শিক্ষিকার চাকরি না পেয়ে হকারিকেই পেশা করলেন বৃষ্টি