কলকাতা : "বিদ্বেষ থেকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে।" সাংবাদিক বৈঠক করে বিস্ফোরক মন্তব্য কবীর সুমনের। গতকালই ‘পদ্মশ্রী’ (Padma Shri) প্রত্যাখ্যান করেন প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay)।
মঙ্গলবার ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপকদের একটি তালিকা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নাম ছিল। তালিকা প্রকাশের পর শিল্পীর লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে ফোন আসে দিল্লি থেকে। ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে তাঁকে সম্মানিত করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে শিল্পীর তরফে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি ‘পদ্মশ্রী’ প্রত্যাখ্যান করছেন। এই সম্মান নিতে অপারগ তিনি।
শিল্পীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, বয়স ৯০ পেরিয়েছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। ১২ বছর বয়স থেকে গান গাইছেন। সঙ্গীতের পিছনে জীবনের ৭৫টি বছর উৎসর্গ করে দিয়েছেন। অথচ এতদিনেও তাঁর মতো সঙ্গীতজ্ঞকে সম্মানের যোগ্য বলে মনে হয়নি। বরং তাঁর চেয়ে কম বয়সের শিল্পীদের সম্মান ধরানো হয়েছে। তাতেই সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন শিল্পী।
আরও পড়ুন ; এত কাল পর সম্মান, মোদি সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ প্রত্যাখ্যান সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের
আজ একই সুরে সুর চড়ান কবীর সুমনও। তিনি বলেন, "বিদ্বেষ থেকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। শ্বেতাঙ্গরা অন্তত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নোবলে পুরস্কারটা দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা অন্য কিছু বিচার করেননি। এই শহরে দুই জন বসে আছেন যাঁরা পদ্মভূষণ পাওয়া। তাঁদের কেরিয়ারটা দেখুন। আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কেরিয়ারটা দেখুন। কী কী ধরনের গান গেয়েছেন উনি। খুব খারাপ লাগছে। এই বয়সে এসে ধাক্কা খেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।"
অন্যদিকে প্রতিক্রিয়া সাহিত্যিক আবুল বাশার এবিষয়ে বলেন, বাঙালি রোমান্স শুরু বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যে দিয়ে। বাঙালি রোমান্স শুরু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানের মাধ্যমে। বাঙালিদের উপরে বিদ্বেষ রয়েছে। প্রকৃত প্রতিভাকে অসম্মান কেন্দ্রের। বাঙালি শিল্পীদের মধ্যে মহত্তম সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাঙালির হৃদয় স্পর্শের জন্য যে মাদকতার প্রয়োজন ছিল তা ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। "
একইভাবে গতকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কন্যা সৌমী সেনগুপ্তর সঙ্গ ফোনে যোগাযোগ করে এবিপি আনন্দ। কোনও রাখঢাক না করেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্র থেকে ফোন করে জানানো হল ‘পদ্মশ্রী’ দেওয়া হবে। বাংলায় যাঁরা গান-বাজনার সাধনা করেন, তাঁদের মধ্যে প্রবীণতম উনি। ১২ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ড করেন। ৭৫ বছর ধরে সঙ্গীতসাধনা করছেন। নবতিপর শিল্পীকে এখন ‘পদ্মশ্রী’ দেওয়াটা অপমান ছাড়া কিছুই নয়। অল্পবয়সিদের তা দেওয়া যায়।’’