সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: পুরুলিয়ার রুখুসুখু প্রান্তর। লালমাটির দেশ। সেখানেই সবুজ ফুটিয়েছেন তিনি। তিনি দুখু মাঝি। আরও একটা নাম রয়েছে তাঁর- গাছ বাবা। কারণ অযোধ্যা পাহাড়, বাঘমুন্ডি এলাকায় ইতিউতি বৃক্ষরোপণ করে চলেন তিনি। দশকের পর দশক ধরে গাছ লাগিয়ে চলেছেন- তাঁর এই সাধনাকেই সম্মান জানাল ভারত সরকার। পদ্ম-পুরস্কারে সম্মানিত করা হল বাঘমুন্ডি থানার সিন্দ্রি গ্রামের বাসিন্দা দুখু মাঝিকে। তাঁদের গাছ বাবা পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হওয়ায় খুশির হাওয়া অযোধ্যা পাহাড়ের আনাচ-কানাচে।


যেখানেই ফাঁকা জায়গা দেখতেন সেখানেই গাছ পুঁততেন তিনি। দেখতে দেখতে বয়স বেড়ে এখন ৮০। তবুও একই উদ্যমে গাছ রোপণ করে যান তিনি। আর গাছ লাগানোর বার্তাও দেন। কতগুলি গাছ পুঁতেছেন?লোকে বলে ওই এলাকায় অন্তত পাঁচ হাজার গাছ তাঁর হাতেই পোঁতা। দারিদ্র নিত্যসঙ্গী তাঁর। কোনওক্রমে টেনেটুলে চলে সংসার। ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি, চাল ঢাকতে ইতিউতি কিছু দিয়ে ঢাকা দেওয়া। ঘরে রয়েছেন স্ত্রী আর এক ছেলে- যিনি বিশেষভাবে সক্ষম। তাঁর আরও এক ছেলে রয়েছেন কিন্তু তিনি আলাদা থাকেন। ঘরের হাঁড়ি চড়ে বার্ধক্যভাতার পেনশন আর রেশনের চালের কারণে। কিন্তু এসব নিয়ে একেবারেই ভাবনায় নেই দুখু মাঝি। তিনি আনন্দ খুঁজে পান গাছে। ছোট থেকেই এই অভ্যেস তাঁর। স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বললেন, 'আমার এক কাকা ছিল, ওর সঙ্গে গাছ লাগাতাম। তখন আমরা পলাশ গাছ বেশি লাগাতাম।' স্থানীয় বাসিন্দা দেবব্রত কুইরী বললেন, 'ভাল লাগছে, আমাদের গ্রামেরই লোক। সরকারি জায়গা, ফাঁকা জায়গা যেমন পান গাছ লাগান। আমরা উৎসাহ দিই। আমাদের কোনও জায়গা থাকলে সেখানেই গাছ লাগাতে বলি জেঠুকে।'


এই নেশার কারণে বনদফতর থেকে একবার সাইকেল উপহার পেয়েছিলেন। সেটাই তাঁর সঙ্গী, সাইকেলে চড়ে হাতে একটি বালতি আর চারাগাছ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। কোনও সরকারি জমি বা পড়ে থাকা কোনও ফাঁকা জমি দেখলেই গাছ লাগিয়ে দেন। এত ভাবনা কাদের জন্য়? পদ্মশ্রী প্রাপক দুখু মাঝি জানাচ্ছেন ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবেই তাঁর এই কাজ। শুধু গাছ লাগিয়েই ক্ষান্ত হন না। প্রতিটি গাছ ধরে ধরে খোঁজ রাখেন তিনি, দেখভালও করেন। এই কাজের জন্য এতদিনে সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা থেকে সাহায্য পেয়েছেন। এবার ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মান- কেমন লাগছে তাঁর? তিনি বললেন,  'ওঁরা দেবতা লোক, তাই এই পুরস্কার দিয়েছেন। খুব ভাল লাগছে।'


শুধু নিজে গাছ লাগানো নয়, অন্যদের গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিতও করেন দুখু মাঝি। বারবার করে বলেন, 'একটা গাছ কাটলে পাঁচটা গাছ লাগাবে, তাহলে অক্সিজেন পাবে। প্রয়োজন হলে গাছ কাটিস বাবা, নয়তো কাটিস না। গাছ কাটা মানে একটা জীব কাটা।' বয়স তো হচ্ছে, আর কতদিন চলবে এই কাজ?  দুখু মাঝির সটান জবাব, 'আরও গাছ লাগাব, গাছ লাগানোটাই আমার কাজ।'


আরও পড়ুন: বলিউডি সুরে নাচের ছন্দ! ভারতকে 'বিশেষ' শুভেচ্ছা 'বন্ধু' রাশিয়ার