সন্দীপ সরকার, সত্যজিৎ বৈদ্য, অতসী মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: সম্পর্ক জটের কারণেই কি অকালে শেষ হয়ে গেল তরতাজা প্রাণ? অভিনেত্রী পল্লবী দে-র (Pallavi Dey Case) মৃত্যুতে উঠে আসছে এমনই প্রশ্ন। জটিলতা যে ছিল, তার ইঙ্গিত উঠে এসেছে অভিনেত্রী পল্লবী দে’র গৃহ সহায়িকার কথাতেও।


পল্লবীর গৃহ সহায়িকা সেলিমা সর্দার এবিপি আনন্দকে ফোনে বলেন, "পল্লবী না থাকলেও, বাড়িতে আসত অন্য মেয়ে। একঘণ্টা দরজা বন্ধ করে থাকত দাদার সঙ্গে। নাম জানি না। তবে দেখলে চিনতে পারব।"


সম্পর্কের জটিলতায় নিজেকে শেষ করে দিলেন পল্লবী!


অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর থেকে যত সময় এগোচ্ছে, ততই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের গোলকধাঁধা সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন মানুষ। প্রেম-ভালবাসা-বিচ্ছেদ-সন্দেহ-প্রতারণা-মৃত্যু, কিছুই বাদ নেই তাতে, যা মিলিয়ে মিশিয়ে দুরন্ত টেলি সিরিজ পর্যন্ত নামিয়ে দেওয়া যায়। 


এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তা হল, তাতে পল্লবী এবং সাগ্নিক চক্রবর্তী লিভ ইন করতেন। সাগ্নিকের স্ত্রী সুকন্যা। সুকন্যার আবার দাবি তাঁর ও সাগ্নিকের রেজিস্ট্রি ম্যারেজের সময় সাক্ষী হিসাবে সই করেছিলেন পল্লবীই। পরে বিবাহিত অবস্থাতেই সাগ্নিকের সঙ্গে আবার পল্লবীর সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন দূরে সরে যান সুকন্যা।


এরই মধ্যে পল্লবীর পরিবারের দাবি, হঠাৎই পল্লবী ও সাগ্নিকের মধ্যে চলে আসেন ঐন্দ্রিলা। সাগ্নিক এবং ঐন্দ্রিলার বিরুদ্ধেই পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছে পল্লবীর পরিবার। ফলে প্রশ্ন উঠছে তবে কি সম্পর্কের জটিলতাতেই শেষ হয়ে গেলেন পল্লবী? 


পল্লবী এবং সাগ্নিকের গৃহ সহায়ক যদিও জানিয়েছেন, রবিবার সকালে পল্লবীর আচরণ তাঁর অস্বাভাবিক লাগেনি। তাঁর কথায়, "আমার সঙ্গে সাড়ে ৭ টা, ৮ টা নাগাদ কথা হয়। তারপর আমাদের অন্য কাজের লোকের মুখ থেকে শুনি মিষ্টি বৌদির এই ব্যাপার। দাদার সঙ্গে কখনও কথা হয় না। দাদা বৌদির আগে অফিসে বেরিয়ে যেত। দাদার সঙ্গে বেশি কথা হত না।"


আরও পড়ুন: Pallavi Dey Demise: 'মেয়ে সাগ্নিককে ভীষণ ভালবাসত, অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক মানতে পারেনি', মন্তব্য পল্লবীর বাবার


এই পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছেন সুকন্যাও, অর্থাৎ সাগ্নিকের স্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, "সাগ্নিক আমার কলেজের বন্ধু। ১০ বছর থেকে চিনি। ২০১৩-তে আলাপ। পল্লবীকে চিনি ২০১৮ থেকে। কিন্তু কনট্যাক্ট ছিল না। আমার থ্রুতেই আলাপ হয় ওদের। ম্যারেজে সাইন? হ্যাঁ, আমার বন্ধু ছিল, বাড়িতে আসাযাওয়া ছিল। বন্ধু হিসেবে ডেকেছিলাম। যখন ও সাগ্নিকের অবচেতন মনে আসে, রিলেশন তৈরি হয়, আমি সরে আসি। আমি যখন ফোটো দেখি, শুনি ঘোরাফেরা করছি, তখন আমি জানতে চাই। দুজনেই অস্বীকার করে। আমি বলেছিলাম, আপনি তো সবই জানেন আন্টি... বাড়ির লোক যে বলছে কিছু জানত না, তা নয়। সবই জানে।"


সাগ্নিকের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়েছিল সুকন্যার সঙ্গে। বিবাহবিচ্ছেদ না হওয়া সত্ত্বেও, পল্লবীর সঙ্গে লিভ ইন করছিলেন সাগ্নিক। পাশাপাশি ঐন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও সাগ্নিকের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল বলে দাবি মৃতার পরিবারের, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে পল্লবীর পরিবার। পল্লবীর বাবার নীলু দে বলেন, "ফ্ল্যাটে ঐন্দ্রিলা আসত। মেয়ের মৃত্যুর জন্য ঐন্দ্রিলা ও সাগ্নিক দায়ী। তাকে খুন করা হয়েছে। তার দাবি উপযুক্ত তদন্ত হোক।দোষীদের শাস্তি হোক।"


পল্লবীর পরিবারের দাবি অস্বীকার ঐন্দ্রিলার


যদিও ঐন্দ্রিলার কথায়, "আমি ভাবতে পারিনা ওঁর বাড়ির লোক আমার নামে এই অভিযোগ তুলবে। আমি কেন সাগ্নিকের সঙ্গে মিশতে যাব? পল্লবী আমার পুরনো বন্ধু ছিল। সেই সূত্রেই সাগ্নিকের সঙ্গে তার আলাপ। আমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না। আমাদের মধ্যে কোন কথা হত না। পল্লবীর ফ্ল্যাটে যেতাম না।" সাগ্নিক-ঐন্দ্রিলার সম্পর্কের তত্ত্ব মানতে চাননি সুকন্যাও। তাঁর বক্তব্য, "ঐন্দ্রিলা কে? ১০-১২ বছর চিনতাম। ও কোনওদিন সাগ্নিকের সঙ্গে ছিল না। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে সাগ্নিকের মেলামেশা ছিল না। পল্লবীর ভাল বন্ধু ছিল ঐন্দ্রিলা।" তাই পল্লবীর রহস্যমৃত্যুতে বহু প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।