সন্দীপ সরকার, সত্যজিৎ বৈদ্য, সুনীত হালদার, কলকাতা: অভিনেত্রী পল্লবী দে-র (Pallavi Dey Death Case) রহস্যমৃত্যু, রাতভর জেরার পরে গ্রেফতার লিভ ইন পার্টনার (Live In Partner) সাগ্নিক চক্রবর্তী। পুলিশ সূত্রে দাবি, আয়ের উত্স নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন সাগ্নিক। বয়ানে রয়েছে অসঙ্গতি। পল্লবীর অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা টাকা ট্রান্সফারের অভিযোগেও রয়ে গেছে ধোঁয়াশা।
পল্লবী দে-র মৃত্যু ঘিরে রহস্য ঘনীভূত, গ্রেফতার সাগ্নিক
অভিনেত্রী পল্লবী দের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় এবার তাঁর লিভ-ইন পার্টনার সাগ্নিক চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার সন্ধেয় তাঁকে গ্রেফতার করে গড়ফা থানা।
রবিবারই পল্লবীর লিভ ইন পার্টনার সাগ্নিক চক্রবর্তী ও বন্ধু ঐন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে খুন, আর্থিক প্রতারণা সহ একাধিক অভিযোগে মামলা দায়ের করে মৃতার পরিবার।
সোমবার সকাল থেকে গড়ফা থানায় সাগ্নিক ও তাঁর মা-বাবাকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি অতুল ভি।
এরপর মঙ্গলবার সন্ধেয় অভিনেত্রী পল্লবীর লিভ ইন পার্টনার সাগ্নিক চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা হয়। মৃত অভিনেত্রী পল্লবীর বাবা নীলু দে বলেন, 'কিছু বলার নেই। চাই সঠিক তদন্ত হোক। আমার যা যাওয়ার, তা তো চলে গেছে। '
পল্লবীর বন্ধু ও অভিনেত্রী প্রত্যুষা পালের কথায়, 'অ্যারেস্ট হয়ছে। কিন্তু জাস্টিস পাওয়া বাকি।'
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত অভিনেত্রী পল্লবীর পরিবারের অভিযোগ, পল্লবী ও তাঁর মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সাগ্নিকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। রাজারহাটে সাগ্নিকের নামে যে ৮০ লাখের ফ্ল্যাট কেনা হয়, তার অনেকটাই দিয়েছিলেন পল্লবী। সাগ্নিককে অডি গাড়িও কিনে দিয়েছিলেন পল্লবী। মৃতার পরিবারের আরও দাবি, ব্যাঙ্কে পল্লবীর ১৫ লক্ষ টাকার যে ফিক্সড ডিপোজিট ছিল, তাতে নমিনি হিসেবে তাঁর লিভ ইন পার্টনার সাগ্নিকের নাম ছিল।
পল্লবীর বাবার দাবি, 'মেয়ে সাগ্নিক চক্রবর্তীকে ভীষণ ভালবাসত। সাগ্নিক ১৯ হাজার টাকা বেতনে কল সেন্টারে চাকরি করতেন। অডি গাড়ি চাপত সাগ্নিক যেটা ২২ লাখ টাকা দিয়ে পল্লবী তাকে কিনে দিয়েছিল। সাগ্নিকের জন্মদিনে দেড় লাখ টাকা দিয়ে ল্যাপটপ উপহার দিয়েছিল। এছাড়া এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিল। তাদের তিনটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট ছিল। এরপরেও সাগ্নিক পল্লবীর বন্ধু ঐন্দ্রিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখত। যেটা মেনে নিতে পারেনি মেয়ে।'
আরও পড়ুন: Cannes 2022: 'কান চলচ্চিত্র উৎসব'-এ প্রদর্শিত হবে এই ৬ ভারতীয় ছবি
পুলিশ সূত্রে কী জানা যাচ্ছে?
পুলিশ সূত্রে দাবি, সাগ্নিক ও পল্লবীর মধ্যে টাকার লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। তবে, মোটা অঙ্কের অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফারের প্রমাণ মেলেনি। দু’জনের চ্যাট হিস্ট্রিতে টাকা পয়সা সংক্রান্ত গোলমালের কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ সূত্রে এও দাবি, নিজের কাজ, আয়ের উত্স নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন সাগ্নিক। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথি ও তথ্যের সঙ্গে সাগ্নিকের বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে আরও দাবি, পল্লবীর পরিবার অভিযোগ করেছে, নিউটাউনে সাগ্নিকের নামে ৮০ লাখের ফ্ল্যাট কেনার সময় ৫৭ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন পল্লবী। যদিও প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, সাগ্নিকের বাবা ২৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি টাকা ধার নেওয়া হয়। যদিও, সাগ্নিকের বাবার দেওয়া ২৫ লক্ষ টাকার কোথা থেকে এল তা জানা যায়নি।
পুলিশ সূত্রে খবর, পল্লবীর মোটা অঙ্কের টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের নমিনি ছিলেন সাগ্নিক। পল্লবীর অবর্তমানে সেই টাকা পাওয়ার কথা সাগ্নিকের। তবে কি মৃত্যুর নেপথ্যে অর্থের জটিলতা? নাকি অন্য কোনও কারণ? এ সব নিয়েই গভীর রহস্যের জট।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিনেত্রীর মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ দায়ের হলেও, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিলেছে। এ নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে আসার পরই স্পষ্ট হবে, পল্লবীর মৃত্যু খুন না আত্মহত্যা।