দীপক ঘোষ, সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : নজিরবিহীন ! ভোটে দুর্নীতির দায়ে সরাসরি যুক্ত থাকার দায়ে সরকারি কর্মচারীদের সাসপেণ্ড করার সুপারিশ করা হল। কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নিযুক্ত কমিটি যে সুপারিশ করেছে। পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election 2023) ব্যালট বিকৃতিতে এসডিও-বিডিও সাসপেন্ডের সুপারিশ করা হল।


উলুবেড়িয়ায় সিপিএম (CPIM) প্রার্থী কাশ্মীরা বেগম খানের ব্যালট পেপার (Ballot Paper) বিকৃতি-মামলা হয়েছিল। ষড়যন্ত্র করে ব্যালটে বিকৃতির অভিযোগে, বিডিও-এসডিওকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে অনুসন্ধান রিপোর্ট। যেখানে উল্লেখ, 'ব্যালট ষড়যন্ত্র করে বিকৃতি, বিডিও-এসডিওর ষড়যন্ত্রে থাকতে পারেন। একইসঙ্গে এই চক্রে যুক্ত অতিরিক্ত অনগ্রসর শ্রেণির দফতরের অফিসার।'


পাশাপাশি ৩ আধিকারিকের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্ত করে পদক্ষেপের নির্দেশ। বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে অনুসন্ধান রিপোর্ট দিয়ে এই সুপারিশ জানালেন আদালতে। 'তাঁর সুপারিশ, এফআইআর করতে হবে'। বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে-র পর্যবেক্ষণ, কাশ্মীরার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তৃণমূল প্রার্থী লুৎফর বেগমের ওবিসি সার্টিফিকেট জাল। কিন্তু এসডিও অভিযোগ পাওয়ার পরেও কোনও পদক্ষেপ না করে আবেদনকারীকে নথি দিতে বলেন। যার জেরেই তিনজনকেই সাসপেন্ড করার সুপারিশ রিপোর্টে। 


কোনও সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে যুক্ত থাকার অভিযোগ ও তা নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে, এফআইআর এমনকি সাসপেন্ড করার সুপারিশ কার্যত নজিরবিহীন। যে ঘটনা সামনে আসার পরই সরকারকে নিশানা করতে শুরু করেছে বিরোধীরা। সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ি বলেছেন, 'চাল টিপলেই বোঝা যায়, ভাত কেমন হয়েছে। পুলিশ-আমলাদের একটা অংশ যে সরকারের সঙ্গে ভোটে অবৈধ কাজে লিপ্ত ছিল, সেটা কার্যত প্রমাণ হয়ে গেল সাসপেণ্ড করার এই সুপারিশে। এরকম সংবিধান বিরোধী কাজ যাঁরা করে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।'


প্রসঙ্গত, নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য তোলপাড় হতে শুরু করেছিল এমনই এক রিপোর্টে। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একাধিক মামলার ভিত্তিতে আদালত প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত বাগকে নির্দেশ দিয়েছিল গোটা বিষয়টা দেখে রিপোর্ট জমা করতে। তাঁদের রিপোর্টে উঠে এসেছিল, একাধিক দুর্নীতির কথা। পঞ্চায়েত ভোটের পরও কার্যত যেন দেখা গেল তেমনটাই। বিরোধীরা পুলিশ ও আমলাদের একাংশের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকার অভিযোগ করেছিল। যার প্রেক্ষিতেই কমিটি গঠন হয়েছিল। তাঁদের তরফেই এমন নজিরবিহীন সাসপেণ্ডের সুপারিশ।


আরও পড়ুন- প্রশাসনিক কারণে শিক্ষক বদলিতে রাজ্যের সিদ্ধান্তে সিলমোহর হাইকোর্টের