উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব নেওয়ার পরদিনই ঘোষিত হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত ভোট। মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেওয়ার জন্য কমিশন যে দিন ও সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে মনোনয়ন পর্ব।
যদিও জোটের ছবিটা এখনও স্পষ্ট নয়। মুর্শিদাবাদ-সহ একাধিক জেলায় একতরফাভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে বামেরা। এখানেই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও সিপিএমের দাবি, আগে মনোনয়ন করা হোক। তারপর জোট নিয়ে আলোচনা হবে। অর্থাৎ আগে মনোনয়ন তারপর, জোট নিয়ে আলোচনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে, এটাই হচ্ছে বাম-কংগ্রেস-এর জোট ফর্মুলা।
বৃহস্পতিবার, পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ। এর জন্য, ৬ দিনে সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই অবস্থায় শুক্রবারই, অধীর চৌধুরীকে এসএমএস করেন মহম্মদ সেলিম। সূত্রের দাবি, তাতে বলা হয়, বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করতে চায়। যত বেশি সংখ্যক আসনে জোট করা যায়, সেটা দেখুন। পাল্টা, এসএমএস করে অধীর চৌধুরী বলেন, 'কংগ্রেসও বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লড়াই করতে প্রস্তুত।' প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, 'তৃণমূল জানে, যে মানুষকে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়, মানুষ যদি অবাধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, তাহলে তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ থেকে সুপরা সাফ হয়ে যাবে, অর্থাৎ তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে কোনও জায়গা পাবে না। মুর্শিদাবাদের কথা ছেড়েই দিন। মুর্শিদাবাদ জেলায় সকলে আমরা, কংগ্রেস-বাম মিলেমিশে আমরা এই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি এবং করব।' কিন্তু, অধীর চৌধুরী যখন এই কথা বলছেন, তখন খোদ তাঁরই জেলা মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলাতে জোট নিয়ে জট তৈরি হয়েছে।
ISF-এর থেকে দূরে কংগ্রেস?
একতরফাভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে বামেরা। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে, জোটের ভবিষ্যৎ কী হবে? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'আগে যে যেখানে পারুক মনোনয়নপত্র জমা দিক, কারণ শেষ দিন পর্যন্ত মনোনয়ন ফেলে রাখা যাবে না। তারপর, আলোচনা করে প্রত্যাহারের সুযোগ তো থাকছেই।' প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, সিপিএমের সঙ্গে আছি, আইএসএফের সঙ্গে জোটে নেই। ২১-এর বিধানসভার মতোই, বামেদের সঙ্গে জোট করলেও, ISF-এর সঙ্গে কংগ্রেস যে কোথাও জোট করবে না, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীর চৌধুরী। এই অবস্থায় ISF-এর দাবি, কংগ্রেস মনে করলেও, তারা কংগ্রেসকে অচ্ছুৎ মনে করে না। ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি বলেন, 'বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করাটাই আমাদের লক্ষ। দরকার হলে আলোচনায় বসতে আমরা প্রস্তুত। কংগ্রেস আমাদের অচ্ছুৎ মনে করলেও, আমরা কংগ্রেসকে অচ্ছুৎ মনে করি না।'
যদিও জোট নিয়ে বিরোধীদের একসঙ্গে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, 'শূন্যের সঙ্গে শূন্যের যোগ, গুণ ভাগ সবই এক।' ISF আরও জানিয়েছে, আসন চিহ্নিত করে তারাও, মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছে। পরে আলোচনা করে বামেদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করা যাবে।
আরও পড়ুন: ঘন-লম্বা চুল পেতে বাড়িতেই করুন পরিচর্যা, চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন এই পাঁচ উপকরণ