ভাঙড় : মনোনয়ন-পর্বে দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল ভাঙড়। ৩টি তাজা প্রাণ চলে যাওয়ার পর এবার পুলিশি নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি। গতকাল রাজ্যপালের সফরের সময়, বিজয়গঞ্জ বাজারে পুলিশের দেখা মেলেনি। রাজ্যপালের নিরাপত্তারক্ষীকেই বোমা সরাতে দেখা যায়। সন্ত্রাসের আতঙ্ক কাটিয়ে যখন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ভাঙড়, তখন দেখা গেল পুলিশি তৎপরতা। এদিন সকাল থেকে বিজয়গঞ্জ বাজারে টহল দিলেন বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার, দুই অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার-সহ উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তারা। সঙ্গে ছিল র‍্যাফ ।  


কখনও বিডিও অফিসে ঢুকে বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া, কখনও বাস-অ্য়াম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে তল্লাশি। গত পরশু দিনভর ভাঙড়ে দাপিয়ে বেড়ায় শাসক দল, আর তা দাঁড়িয়ে দেখে পুলিশ। দুষ্কৃতী নয়, বরং তারা বেশি ব্যস্ত ছিল সংবাদমাধ্য়মকে আটকাতে।


ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস। সন্ত্রস্ত গোটা ভাঙড়! আর সেখানেই, পুলিশ কার্যত চোখে ঠুলি পরে! কানে তুলো গুঁজে। গত পরশু সকাল থেকেই ভাঙড় জুড়ে শুরু হয় দুষ্কৃতীদের সন্ত্রাস। মুহুর্মুহু পড়তে থাকে বোমা। সেই সঙ্গে শোনা যায় গুলির শব্দ। আধঘণ্টায় ১০০ বোমা পড়ে। কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, কারও পাইপ। একটা সময় সংবাদ মাধ্য়মকে লক্ষ্য় করে শুরু হয় বোমাবাজি। কিন্তু এসব কিছুই দেখতে পায়নি পুলিশ। গলির মুখ থেকে ধেয়ে আসে একের পর এক বোমা, গুলি। আক্রমণের উদ্দেশে বাঁশ, লাঠি হাতে ছুটে আসে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু দুষ্কৃতীদের আটকাতে নয়, পুলিশের তখন লক্ষ্য় একটাই, সংবাদ মাধ্য়মকে থামানো। পুলিশ মিডিয়া আটকাতে ব্য়স্ত। 
যাতে খবর সম্প্রচার করা না যায় ।


এপ্রসঙ্গে ভাঙড়ের ISF বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি বলেন, 'টোটালি নীল পুলিশের ভূমিকা। পুলিশ নিয়ে গেছিল। পুলিশের সামনে থেকে কাগজ কেড়ে নিয়েছে। পুলিশমন্ত্রী পদত্য়াগ করতে হবে।'


একই ছবি ধরা পড়ে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারেও। সেখানেও মুহুর্মুহু চলে গুলি, পড়ে বোমা। আগুন ধরানো হয় একের পর এক গাড়িতে। হেলমেট পরে, হাতে লাঠি নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় শাসকের গুন্ডাবাহিনী। 


টানা চারদিন ভাঙড় যেন সন্ত্রাসের মুক্তাঞ্চল থেকেছে। বিডিও অফিসের ভিতরে তৃণমূল। আর বাইরে বিশ্রামে পুলিশ। এরইমধ্য়ে দাপটের সঙ্গে গাড়িতে চেপে, বিডিও অফিসে ঢোকেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। তারপরই, বিডিও অফিসের গেট আটকে দেয় তৃণমূল। ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় সংবাদমাধ্য়মকে।


ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকে, এক আইএসএফ কর্মী কোনওক্রমে মনোনয়ন কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে পারেন। কিন্তু সেখানে তাঁর হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় ফর্ম। নথিপত্র। 


বাসে বা গাড়িতে চেপে যাতে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন কেন্দ্রে না আসতে পারে তাই, বাসন্তী হাইওয়ের নলমুড়ি হাসপাতাল মোড়ে সকাল থেকেই জড়ো হয় তৃণমূল কর্মীরা। বাস থেকে শুরু করে গাড়ি... সবেতে চলে তল্লাশি। বাদ যায়নি অ্য়াম্বুল্য়ান্স, বিয়ে বাড়ির গাড়িও। দুষ্কৃতীদের কারও মাথায় হেলমেট, কারও আবার মুখোশ। কিন্তু পুলিশ কোথায়, যে তাদের আটকাবে ? দেখা যায়নি তাদের। 


এমনকী, গতকাল ভাঙড়ে গিয়ে রাজ্যপালকেও হাঁটতে হয় বোমা বিছানো পথে। রাজ্যপালের থেকে মাত্র ২ পা দূরে দেখা যায় পড়ে আছে বোমা। পুলিশের কোনও বড় কর্তা দেখা যায়নি রাজ্য়পালের সঙ্গে! শেষ অবধি রাজ্যপালের নিরাপত্তারক্ষী সেটিকে সরিয়ে নিয়ে যান। পুলিশের এহেন ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবারই ভাঙড়ে প্রাণ ঝরেছে ৩ জনের। যার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।