কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, হিন্দোল দে ও ঋত্বিক প্রধান, কলকাতা: সব ঠিক থাকলে আগামী বছরেই পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। তার আগে রাজ্যে ক্রমশ চড়ছে উত্তেজনার পারদ। কোথাও প্রচার ঘিরে চাপানউতোর চলছে। কোথাও আবার হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ উঠছে। প্রায়শই রাজ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্ধার হচ্ছে অস্ত্র। যার ফলে পঞ্চায়েত ভোটের সময় অশান্তি-মারপিটের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধী দলগুলি।
শুভেন্দুর আশ্বাস:
এই আবহে শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও উঠল পঞ্চায়েতের ভোটের ইস্যু। শনিবার ডায়মন্ডহারবারের সভা থেকে মনোনয়ন নিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারির সুর শোনা যায় শুভেন্দু অধিকারীর গলায়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, '২০১৬ সালের পর ভাইপো বাহিনী ভোট করতে দেয়নি। নমিনেশন করতে দেয়নি। এবার খেলাটা দেখাব। গ্রামে প্রার্থী ঠিক করতে পারবেন তো? নমিনেশন করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।'
অভিষেকের বার্তা:
যদিও, কাঁথির সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ভোট হবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়,
'পঞ্চায়েত ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় না, তারা টালবাহানা করে বেড়াচ্ছে।'
আর মাত্র কয়েকমাস গেলেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। কিন্তু, তার আগেই কোথাও অস্ত্র উদ্ধার, কোথাও আবার খুনের ঘটনাও ঘটছে। মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় তৃণমূল নেতাকে খুনের ঘটনা ঘটেছে। বীরভূমের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, মিনাঁখাতেও বিস্ফোরণ ঘটেছে। সভার দিন হাটুগঞ্জে বিজেপি নেতাকে মারধর করা হয়েছে। একাধিক তৃণমূল নেতার হুঁশিয়ারি ঘটনাও সামনে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, এবারের পঞ্চায়েত ভোট কি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে? ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের হিংসার পুনরাবৃত্তি কি ২০২৩ সালেও হবে? শনিবারের সভা থেকে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, 'অভিষেকবাবু ভাববেন না, চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। চাকা ঘুরছে। ২০১৮-তে যা হয়েছে, ২০২১-এ যা হয়েছে, ২০২৩-এ তা হবে না। শ্যামাপ্রসাদ বলেছেন, প্রতিবাদে কাজ না হলে প্রতিরোধ, প্রতিরোধে কাজ না হলে প্রতিশোধ।'
পাল্টা সুর শোনা গিয়েছে অভিষেকের গলাতেও। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বুক চিতিয়ে লড়াই করছি, কত ক্ষমতা এসো দেখি। যে সংখ্যায় মানুষ সভায় রয়েছে, এরা ভোট দিলে খুঁজে পাওয়া যাবে না।' শনিবারের সভা থেকে ইডি-সিবিআইয়ের প্রসঙ্গ টেনে কটাক্ষ করেন অভিষেক।
সভার অনুমতি নিয়েও তরজা:
সভা খেকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সহায়তায় মাঠে এনওসি নিয়ে রেখেছিলাম। কোর্ট বলল, লাইট হাউসের মাঠে করো। সভার অনুমতি পাওয়ার পর ঘাস ছাঁটতে শুরু করলাম। ছোটখাটো প্যান্ডেল করলাম। রাত ন'টার পর ঢুকল কাউন্সিলরের বাহিনী। তারা প্রথম এসে যা যা করার করে গেল। তারপর সরিসার বাহিনী এল, সব খুলে নিয়ে গেল।' পাল্টা অভিষেক বলেন, 'ডায়মন্ডহারবারে গিয়েছে। বলছে ডেকরেটর নেই। অভিষেককে ফোন করুন, আমি লোক দেব। লোক নেই, ফুটেজ খেতে গেছেন। ফুটেজ খেতেও আমার নাম, দিল্লির কাছে নম্বর বাড়াতেও আমার নাম। আমার নাম ব্যবহার করুন, অক্সিজেন পাবেন।'
ভোটের আগেই উত্তেজনা তুঙ্গে। কখনও অস্ত্র উদ্ধার, কখনও মারপিটের অভিযোগ। অভিষেকের শান্তির আবহে পঞ্চায়েতের ভোটের বার্তার পরেও কি অশান্তির ঘটনা ঘটবে? নাকি সুষ্ঠুভাবেই হবে পঞ্চায়েত ভোট, বলবে সময়।