প্রকাশ সিনহা, কলকাতা : কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন কী হল যে ইসআই জোকা হাসপাতালে (ESI Joka Hospital) যাঁকে ফিট সার্টিফিকেট দিল, তাঁকেই কিছুক্ষণ পর ভর্তি করে নিল এসএসকেএম হাসপাতাল (SSKM Hospital)। প্রশ্ন তুলছেন এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের আধিকারিকরা (Enforcement Directorate)। বলা ভাল, এসএসকেএম হাসাপাতালের বিরুদ্ধে মন্ত্রীর চাপের কাছে প্রভাবিত হওয়ার গুরুতর অভিযোগই আনছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থা।


কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মতো সোমবার সকাল ৭ টা ৩২ মিনিটে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয় অ্যাম্বুলেন্স। গ্রিন করিডর করে ২৫ মিনিটে রাজ্যের মন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স বদলে তারপর তাঁকে নিয়ে গুয়াহাটি থেকে আসা চার্টার্ড বিমান তথা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে ভুবনেশ্বররের দিকে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই ভুবনেশ্বর এইমসে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা হবে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু এসবের মাঝেই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রভাব খাটিয়ে এসএসকেএমে ভর্তি ঘিরে। আর যা তুলল ইডি।


এসএসসির নিয়োগে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারির পরে শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আলিপুর কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানায় ইডি। যদিও ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচারক এসএসকেএমে ভর্তি করানোর পক্ষে সায় দেন। তারপর থেকে সেখানেই ভর্তি ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী। কিন্তু ইডি আধিকারীরকদের দাবি, গ্রেফতারের পর তাঁকে ইসআই জোকা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেখানে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ফিট সার্টিফিকেট। শনিবার দুপুরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ব্যাঙ্কশাল আদালতে গিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তারপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কী এমন হল যে মন্ত্রীকে হুইলচেয়ারে নিয়ে যেতে হল এসএসকেএমে। পাশাপাশি তাঁকে ভর্তিও করে নেওয়া হল। 


এসএসকেএমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসার সমস্ত নথির পাশাপাশি ভুবনেশ্বর এইমসে যাওয়ার পথে তাই ইএসআই জোকা হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মন্ত্রীর সমস্ত রিপোর্ট নিয়েই ভুবনেশ্বর এইমসের উদ্দেশে মন্ত্রীকে নিয়ে উড়ে গিয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। পাশাপাশি সঙ্গে গিয়েছেন মন্ত্রীর আইনজীবীও। আজ বিকেল ৪টেয় মামলার শুনানির সময়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পেশ করা ব্যবস্থা করবে ইডি। তার আগে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমস্ত রিপোর্ট ভার্চুয়ালি জানিয়ে দেবেন ভুবনেশ্বর এইমসের চিকিৎসকরা।


প্রসঙ্গত, ইডির করা মামলার প্রেক্ষিতে এসএসকেএমকে নিয়ে কড়া পর্যবেক্ষণ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর পর্যবেক্ষণ, এসএসকেএমের মেডিক্যাল রিপোর্টের সাহায্যে তদন্ত প্রক্রিয়া এড়িয়েছেন শাসকদলের নেতারা। সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক উদাহরণ আছে। সামগ্রিকভাবে এসএসকেএমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। ইডির পক্ষ থেকে অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল অভিযোগ করেন, ইডির হেফাজত এড়াতে অসুস্থতার নাটক করছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কেন এসএসকেএমকেই বেছে নিলেন অভিযুক্ত? কারণ, তিনি বুঝেছেন, এই হাসপাতালকে ম্যানেজ করতে পারবেন। হাসপাতালে ইডি অফিসারদের সঙ্গে ডনের মতো আচরণ করছেন উনি।


উল্লেখ্য, এসএসকেএমের চিকিৎসকদের দাবি, হৃদযন্ত্রে সমস্যা আছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। চিকিৎসার পরিভাষায় যার নাম - বাইফাসিকুলার ব্লক।হৃদযন্ত্রে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি হয় যে নির্দিষ্ট অংশ থেকে, সেখানেই ত্রুটি বলে চিকিৎসকদের দাবি। ভবিষ্যতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পেসমেকার বসানোর প্রয়োজন হতে পারে বলে চিকিৎসকদের মত। চিকিৎসকদের আরও দাবি, স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং অ্যারিদমিয়া রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কিডনিতে সমস্যা থাকায় মাঝে মধ্যে পা ফুলে যাওয়ার সমস্যাও আছে। এবার ভুবনেশ্বর এইমসের চিকিৎসরা রাজ্যের মন্ত্রীকে দেখে কী মতামত দেন, সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।


আরও পড়ুন- পার্থকে ভুবনেশ্বর নিয়ে যেতে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছল এয়ার অ্যাাম্বুলেন্স, এসএসকেএমে শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত তৎপরতা