মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: যুদ্ধের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন। কিন্তু ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিতই। তাই ঘরে ফিরেও স্বস্তি পাচ্ছেন না দুর্গাপুরের দুই যমজ বোন। দুশ্চিন্তায় তাঁদের পরিবারও। কম খরচে ডাক্তারি পড়াতেই দুই মেয়েকে ইউক্রেন পাঠিয়েছিলেন। এখন কী ভাবে সবকিছু সামাল দেবেন, ভাবতে গিয়েই সব গুলিয়ে যাচ্ছে তাঁদের।
পশ্চিম বর্ধমান দুর্গাপুরের রাতুড়িয়ার বাসিন্দা রুমকি এবং ঝুমকি গঙ্গোপাধ্যায়। পরিবারের যমজ কন্যা তাঁরা। দু’জনই মেধাবী ছাত্রী। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নও দেখা একই সঙ্গে। কিন্তু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে দুই মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানোর সাধ্য ছিল না পরিবারের। তাই কম খরচে বিশ্বমানের পড়াশোনার নদির রয়েছে যে দেশের, পরস্পরের ভরসায় দুই বোনকে সেই সুদূর ইউক্রেনে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরিণতি এমন হবে ভাবতে পারছেন না পরিবারের কেউই।
রুমকি এবং ঝুমকি খারকিভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। দু’জনই প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। তাঁরা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কী করপবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। প্রথমে স্থানীয় একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মুহুর্মুহু বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ার শব্দে বেঁচে ফেরার আশাটুকুও হারাতে বসেছিলেন।
তাতেই সাহস করে দুই বোন বেরিয়ে পড়েন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে খারকিভ থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। কোনও রকমে একটি বাসে ওঠার সুযোগ পান। তাতে চেপে পৌঁছে যান রোমানিয়া সীমান্তে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে রোমানিয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছন। তার পর সেখান থেকে দিল্লি হয়ে মঙ্গলবার বাড়ি ফেরেন। দুই মেয়েকে কাছে পেয়ে স্বস্তিতে রুমকি-ঝুমকির মা সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘খুব আনন্দ হচ্ছে। অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে!’’
পাড়ার মেয়েরা নিরাপদে ফিরেছেন, তা দেখতে ভিড় করছেন পড়শিরাও। দেখা করে, আশ্বস্ত করে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রাণে বেঁচে ফিরলেও, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ভোগাচ্ছে রুমকি-ঝুমকিকে। ঝুমকি বলেন, ‘‘খরচ কম বলে ওখানে পড়তে গিয়েছিলাম। এখন কী করব সেটাই চিন্তার। সরকারকে অনুরোধ করব সাহায্য করতে।’’