মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: বধূমৃত্যুতে পুলিশের জালে খোদ স্বামী। বধূর দিদির অভিযোগের ভিত্তিতে অবশেষে গ্রেফতার স্বামী। দুর্গাপুরের ফরিদপুর ব্লকের ইছাপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হেতেডোবা এলাকায় মৃত্তিকা হাজরার মৃত্যু হয়। বাপেরবাড়ির দাবি, মৃত্তিকার শ্বশুরবাড়ির দাবি ছিল, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন মৃত্তিকা। মৃত্তিকা হাজরার দিদি রাধা হাজরা অভিযোগ করেন, সোমবার রাতে তাঁদের বোনকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন এটাকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বলে সাজাবার চেষ্টা করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, মৃত্তিকার স্বামী আকাশ হাজরার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। আর সেই কারণেই পরিবারে লেগে থাকতো ঝামেলা। ওই ঘটনা নিয়ে বারবার ঝামেলা হয় বলে অভিযোগ। মৃত্তিকার ওপর আকাশের বাড়ির লোকজন অকথ্য অত্যাচার চালাত বলে অভিযোগ মৃত্তিকার দিদির। সোমবার রাত্রে মৃত্তিকাকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে আকাশের পরিবারের লোকজন সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় । 


তীব্র ক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ:
মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে মৃত্তিকার পরিবারের লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মৃত্তিকার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার মৃত্তিকার মৃতদেহ রাস্তার ওপর রেখে পথ অবরোধ করেন পরিবারের লোকজন। ঘটনায় হেতেডোবা শিল্প তালুক এলাকার রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় লাউদোহার ফরিদপুর থানার পুলিশ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রাস্তায় যানজটের অবস্থা স্বাভাবিক হয়। এই ঘটনায় মৃতার স্বামী আকাশ হাজরাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে বুধবার দুর্গাপুর মহাকুমা আদালতে তোলা হয়। পুলিশ আকাশ হাজরাকে তাদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় । মৃত্তিকার শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন বর্তমানে পলাতক।


যদিও মৃত্তিকার বাপেরবাড়ির অভিযোগ অস্বীকার করেছে মৃত্তিকার স্বামী আকাশ হাজরা। তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করা হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। আকাশের দাবি, তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।


বধূ নির্যাতনের এমন ঘটনা প্রায়শই শোনা যায় রাজ্যের নানা প্রান্তে। এমন ঘটনার পরিসংখ্যান উঠে এসেছে কেন্দ্রের রিপোর্টেও। ২০২২ সালের NCRB-এর রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবমিলিয়ে দেশে বধূ নির্যাতনের গর হার ২০.৫০ শতাংশ। সেখানে বাংলা প্রতি ১ লক্ষ বিবাহিত মহিলা পিছু বাংলার হার ৪১.৫০ শতাংশ। তখন  বাংলার মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এ নিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "সমাজে আজও বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসা যে ঘটে চলেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ভারত তথা বাংলার বাস্তব পরিস্থিতি এটাই। তবে আমার মনে হয়, এর একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ বোঝা যাচ্ছে, বাংলার মহিলারা এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে আজকাল আর অভিযোগ জানাতে ইতস্তত বোধ করেন না। এবং প্রশাসনও তার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। একটা স্বচ্ছতা যে তৈরি হয়েছে, এই রিপোর্টই তার প্রমাণ। তবে এখনও অনেক রাজ্যের মহিলারা অভিযোগ জানাতে ভয় পান।"


আরও পড়ুন: পার্ক না কি ট্রেডমিল? দৌড়নোর লাভ কোথায় বেশি? কোনটা বাছবেন?