মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর : বছর ঘোরার আগেই 'গায়েব' সুফল বাংলার গাড়ি। ফের কম দামে সবজি বিক্রি করে ক্ষতির মুখে চাষিরা। এই পরিস্থিতিতে চাষিরা চাইছেন, 'সুফল বাংলার' ভ্রাম্যমান গাড়ি আবার চালু করা হোক এবং তাঁদের কাছ থেকে সঠিক দাম দিয়ে সবজি কেনা হোক।
লক্ষ্য ছিল, সঠিক মূল্য দিয়ে চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের দু'টি জায়গায় শুরু হয়েছিল 'সুফল বাংলার' প্রকল্প। কলকাতার রেড রোড থেকে দক্ষিণবঙ্গের কাঁকসায় 'সুফল বাংলার' আটটি ভ্রাম্যমান গাড়ির ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁকসার কৃষক বাজার থেকে সেই আটটি ভ্রাম্যমান গাড়ি পৌঁছে যেত কাঁকসা এবং দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের কৃষিজ এলাকায়। সেখানে চাষিদের কাছ থেকে টাটকা সবজি কেনা হত সঠিক মূল্যে। তারপর সেই সবজি বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যেত। পৌঁছে যেত সুফল বাংলার স্টলেও। এর জেরে কয়েক মাস চাষিরা লাভের মুখও দেন। কিন্তু, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই সুবিধা আর মিলছে না।
কাঁকসার বিদবিহারের চাষি উত্তম ঘোষ বলেন, 'এলাকা থেকে কুইন্টাল কুইন্টাল সবজি পৌঁছে যায় দুর্গাপুর শহরে। কিন্তু, এত সবজি প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরের বাজারে নিয়ে যেতে বহু টাকা খরচ হয়। সেই জন্য বাধ্য হয়ে কম দামেই ফড়েদের কাছে সবজি বিক্রি করে দিতে হয়। শীতের মরসুমে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মটরশুঁটি, বেগুন-সহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না।' তাই তাঁরা চাইছেন, সুফল বাংলার ভ্রাম্যমান গাড়ি চালু করা হোক এবং তাঁদের কাছ থেকে সবজি কেনা হোক।
'সুফল বাংলার' গাড়ির চালক বাবর আলি জানান, আটটি গাড়ি চলত। ছ'টি গাড়ি অন্যত্র চলে গিয়েছে। তবে কোথায় গিয়েছে তা তাঁরা জানেন না।
এই ইস্যুতে ব্লকের বিজেপির সহ-সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঢালি তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, 'এ রাজ্য প্রকল্প ঘোষণা রাজ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মানুষ কোনও সুবিধা পাচ্ছে না।'
পশ্চিম বর্ধমান জেলার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, 'শুধু প্রচারের আলোয় আসার জন্য প্রকল্পের উদ্বোধন করে। প্রকল্প বন্ধ করে দেয় ফড়েদের সাহায্য করার জন্য। সুফলে বাংলা কুফলে পরিণত হয়েছে।'
রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানান, কী কারণে এই প্রকল্প বন্ধ হয়েছে তা তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। সাময়িক কোনও সমস্যার জন্য বন্ধ হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু চাষিদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে তৎপর রাজ্য কৃষি দফতর। গাড়িগুলি যাতে পুনরায় চালু হয় সেই ব্যবস্থা তিনি করবেন বলে আশ্বাস দেন।