সৌমেন চক্রবর্তী, মেদিনীপুর : মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পর অবশেষে নড়েচড়ে বসল বন দফতর (Foret Department)। সিল করা হল পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) ৭০টি অবৈধ কাঠ মিল। আগামী দিনেও এই অভিযান চলবে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
শুধু বিশ্ব পরিবেশ দিবসে নয়, সবুজকে বাঁচানোর লড়াইটা প্রতিদিনের। কিন্তু, গড়বেতা থেকে নারায়ণগড়...জঙ্গলমহলে ক্রমেই হারাচ্ছে সবুজ ৷ বারবার উঠছে সবুজ ধ্বংসের অভিযোগ। সম্প্রতি মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বেআইনিভাবে গাছ কাটা রুখতে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, বন কোন কোন বিডিওর আন্ডারে পড়ে ? গড়বেতা, শালবনি, কেশয়াড়ি, কেশপুর। আপনার বিশেষ নজর দেবেন, কারা এই কাঠ চুরির সঙ্গে যুক্ত সঙ্গে সঙ্গে থানায় অভিযোগ জানাবেন।
অবশেষে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ৭০টি অবৈধ কাঠ মিল সিল করল বন দফতর। এদের কারও লাইসেন্স ছিল না বলে বন দফতর সূত্রে খবর। পাশাপাশি, আড়াবাড়ি রেঞ্জের মহারাজপুর থেকে আটক করা হয়েছে একটি বেআইনিভাবে কাঠ বোঝাই গাড়ি। আগামী দিনে নজরদারির পাশাপাশি, অবৈধ কাঠ মিলগুলি সিল করার প্রক্রিয়া চলবে বলে বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।
আড়াবাড়ি ও নয়াবসতের রেঞ্জার মলয়কুমার ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে, ধরপাকড়ও করা হচ্ছে। অবৈধভাবে কাঠ পাচার করার সময় একটি গাড়ি ধরা হয়েছে। যে সমস্ত লাইসেন্সবিহীন অবৈধ কাঠ মিল রয়েছে, সেগুলোকে সিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আড়াবাড়ি রেঞ্জে ৪ টা এবং নয়াবসত রেঞ্জে ১৭ টা রয়েছে। আগামীদিনেও এই অভিযান চলবে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (বন ও ভূমি) নেপাল সিংহ বলেন, যেগুলোর লাইসেন্স নেই, যাদের কোনও পারমিশন নেই, সেই কাঠমিল গুলোই বেশি করে চোরাই কাঠের ব্যবসা করছে। সেই জন্যই বন দফতর থেকে সমস্ত জায়গায় লাইসেন্সবিহীন কাঠমিল গুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৬০-৭০ টা কাঠ মিল বন্ধের নোটিস ধরানো হয়েছে।
এতদিন তাহলে এই অবৈধ কারবার চলছিল কীভাবে ? তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, অবৈধভাবে এগুলো এতদিন চলছিল কীভাবে ? যারা এই কাঠমিল গুলো বৈধভাবে চালাতে সাহায্য করলেন, টাকা নিয়ে বা কোনও কিছুর বিনিময়ে, তাদেরকে আগে ধরা হোক।
যদিও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অজিত মাইতি বলেন, বিজেপির কাজ হচ্ছে ক্রমাগত ছিদ্র অন্বেষণ করে চলা। কেন ? জঙ্গলমহলের কাঠমিল গুলো বন দফতর বন্ধ করে দিয়েছে, যেগুলো অবৈধ ছিল। সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছেন। আসলে ওই কাঠমিলগুলো থেকে ওরা বোধহয় কিছু বখরা পেত।
এলাকাবাসীদের দাবি, প্রায় প্রতিদিনই একটু একটু করে ফাঁকা হচ্ছে শাল, সেগুন, আকাশমনির জঙ্গল। বন দফতরের পদক্ষেপে আশার আলো দেখছেন বাসিন্দারা।