সুনীত হালদার, হাওড়া: নেশামুক্তি কেন্দ্রে রোগীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে তীব্র আলোড়ন হাওড়ার দাশনগরে। কেন্দ্রের মালিক-সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মালিক-সহ ২ জনকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
যা জানা গেল...
ছোট্ট একটি ঘর। তার মধ্যেই ২ সারি বিছানা পেতে শুয়ে আছেন প্রায় ২০ জন। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১০টা। হঠাৎ একজনকে মারধর শুরু করলেন ৩-৪ জন। হইচই শুনে কেউ বিছানায় উঠে বসলেন, কেউ টর্চ জ্বালিয়ে মারধরে সাহায্য করলেন। হাওড়ার দাশনগর নেশামুক্তি কেন্দ্রে রোগীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় সামনে এসেছে এই সিসিটিভি ফুটেজ। পরিবারের তরফে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কেন্দ্রের মালিক সহ -৬ জনকে গ্রেফতার করেছে দাশনগর থানার পুলিশ। মৃতের ভাইয়ের দাবি, সিসিটিভিতে তিনি স্পষ্ট দেখেছেন, রোগীকে মারা হচ্ছে। বাকি রোগীরাও মারধর করছেন তাঁকে। পরিবার সূত্রে খবর, গত ১৫ অগাস্ট ওই ব্যক্তিকে নেশামুক্তি কেন্দ্রটিতে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই রাতেই তাঁর উপর মারধর চলে বলে অভিযোগ। তাতেই মারা যান তিনি, শোনা যাচ্ছে এই কথাও। যদিও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে হোম কর্তৃপক্ষ। নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিক, অভিযুক্ত কুমার মিত্রের বক্তব্য, মারধর করা হয়নি। বৃহস্পতিবার ধৃতদের হাওড়া আদালতে পেশ করা হলে মালিক সহ ২ জনকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
নেশামুক্তি কেন্দ্রে নানা ধরনের অত্যাচারের অভিযোগ নতুন নয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অকথ্য অভিযোগ, এমনকি খেতে না দেওয়ার দাবিও উঠেছিল বাঁকুড়ার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র ঘিরে। পরিস্থিতি এমন জায়গাতেই পৌঁছয় যে রোগীদের পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন মিলে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভাঙচুর চালিয়েছিলেন বলে জল্পনা ছড়ায়। এমনকি ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে পরিবারের লোকজন রোগীকে নিয়ে পালিয়েও যান বলে উঠে আসে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের কবরডাঙা এলাকার ঘটনা। বেসরকারি উদ্যোগে সেখানে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। বেশ কিছু দিন ধরে সেটি ভালই চলছিল। দূরান্ত থেকে নেশাসক্তদের সুস্থ করে তুলতে ভিড় করছিলেন সাধারণ মানুষ। হঠাৎই ফেব্রুয়ারি মাসে তাল কাটে। ধুন্ধুমার পরিস্থিতি ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় সূত্রে উঠে আসে, ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জন এসে ভিড় করতেন। রোগীদের সুস্থ করিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আশা ছিল তাঁদের। সেখানে রেখে চিকিৎসার জন্য পরিবারের কাছ থেকে মোটা টাকাও নেওয়া হত। কিন্তু টাকার বিনিময়ে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়ার পরিবর্তে রোগীদের উপর শারীরিক অত্যাচার চালানো হত বলে শোনা যায়। দীর্ঘ দিন ধরে এমন ঢের অভিযোগ জমা হচ্ছিল সেখানে। শেষমেশ তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।