নয়াদিল্লি: সাইবার জালিয়াতি রুখতে মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত সিমকার্ড নিয়ে কড়া বিধি কেন্দ্রের (SIM Card)। মোবাইল সিমকার্ড বিক্রেতাদের জন্য এল কড়া নিয়ম। একঝাঁক পণ্য নিয়ে সিমকার্ড ব্যবসায় পা রাখছেন যাঁরা, এবার থেকে পুলিশের কাছে যাচাইকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তাঁদের। যেতে হবে বায়োমেট্রিক পরীক্ষার মধ্যে দিয়েও। শুধু তাই বয়, সরকারি ভাবে নাম নথিভুক্তিকরণও এখন থেকে বাধ্যতামূলক করা হল। (Telecom Ministry)


কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) বৃহস্পতিবার এই নয়া বিধির ঘোষণা করেন। তিনি জানান, মোবাইল সিমকার্ড বিক্রেতাদের প্রত্যেককে এই নিয়ম মানতে হবে। পুলিশি যাচাইকরণের পাশাপাশি, বায়োমেট্রিক পরীক্ষা এবং নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক প্রত্যেকের ক্ষেত্রে। বিধি লঙ্ঘনে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও করা হতে পারে। 


অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনা সামনে এসেছে। সরকারি হিসেব-নিকেশ রাখে যে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া, তাদের একটি রিপোর্টে বলা হয়, চিকিৎসাজনিত খরচ বাবদ কত মানুষ অর্থসাহায্য পেয়েছেন, তার হিসেব জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তা ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায়, ৭ লক্ষ ৫০ হাজার গ্রাহকের ফোন নম্বর হিসেবে উল্লেখ রয়েছে একটি মাত্র নম্বরই, ৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯, বাস্তবে এই ফোন নম্বরটির অস্তিত্বই নেই।


আরও পড়ুন: Middle Class Average Income: ৪.৪ থেকে ১৩ লক্ষ! আয় বেড়েছে মধ্যবিত্তের, দাবি SBI রিপোর্টে


সেই নিয়ে বিরোধীরা যখন দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন, মোবাইল সিমকার্ড বিক্রি নিয়ে কড়া বিধি আনল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার অশ্বিনী জানান, জাল নথি দিয়ে হস্তগত করা ৫২ লক্ষ সিমকার্ডকে সম্প্রতি চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র এবং সেগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। মোবাইলের সিমকার্ড বিক্রির ব্যবসায় যুক্ত ৬৭ হাজার বিক্রেতার নাম তোলা হয়েছে কালো তালিকায়।  এ বছর মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ৩০০ সিমকার্ড বিক্রেতার বিরুদ্ধে FIR দায়ের হয়েছে বলেও জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।


এর পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এদিন বলেন, "আগে একেবারে ঝাঁকে ঝাঁকে সিমকার্ড কিনতেন মানুষজন। তার জন্য আলাদা নিয়ম ছিল। কিন্তু সেগুলি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের জন্য কড়া বিধি আনা হচ্ছে, যাতে জালিয়াতি বন্ধ করা যায়।" সিমকার্ড ব্যবসা নিয়ে শীঘ্রই নয়া আইনও আনা হবে বলে জানিয়েছেন।


সিমকার্ড বিক্রির ব্য়বসায় পা রাখতে চলেছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়া বিধি। এর পাশাপাশি, যে ১৮ লক্ষ সিমকার্ড বিক্রেতা আগে থেকেই করে কর্মে খাচ্ছেন, তাঁদেরও যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তার জন্য যথেষ্ট সময়ও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। শুধুমাত্র ব্যবসার ক্ষেত্রে নয়, ব্যক্তিবিশেষেও KYC বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সিমকার্ড হাতে পাওয়ার সময়ই তা সম্পন্ন করতে হবে।


অচেনা নম্বর থেকে পাওয়া ফোন, মেসেজে পাঠানো লিঙ্ক থেকে টাকা খোয়ানোর ভূরি ভূরি অভিযোগ ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। ফোন নম্বরের ব্যবহারে যে সরকারি প্রকল্প, তাতেও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। তার জেরেই এই নয়া বিধি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এর আগে, পঞ্জাব পুলিশের তরফে এমন পদক্ষেপ করা হয়েছিল। চলতি বছরের মে মাসে ১৮ লক্ষ সিমকার্ড ব্লক করে দেয় পঞ্জাব পুলিশ। ভুয়ো নথি দেখিয়ে সেগুলি হস্তগত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। গ্রেফতারও করা হয় ১৭ জনকে। এবার রাশ নিজের হাতে তুলে নিল কেন্দ্রীয় সরকার।