বিজেন্দ্র সিংহ ও দীপক ঘোষ, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার দেড় বছর আগেই 'গঙ্গা জলচুক্তি ১৯৯৬' পুনর্নবীকরণের আলোচনার উদ্যোগ নিল ভারত। আর এই নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে আলোচনা না করেই কীভাবে গঙ্গার জল নিয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলার শাসক দল। 


১৯৯৬ সালের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। সেই চুক্তির (Ganga Water Treaty) মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ২০২৬ সালে। তার দেড় বছর আগেই, 'গঙ্গা জলচুক্তি ১৯৯৬' পুনর্নবীকরণের আলোচনার সিদ্ধান্ত নিল ভারত।


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Bangladesh PM Sheikh Hasina) সঙ্গে বৈঠকের পর, যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) বলেন, 'আমরা ১৯৯৬ সালের গঙ্গা জলচুক্তির পুনর্নবীকরণের জন্য প্রযুক্তিগত স্তরে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও পরিচালন পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য শীঘ্রই প্রযুক্তিবিদদের একটি দল বাংলাদেশে যাবে।'


১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর, নয়া দিল্লিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবেগৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। গঙ্গা থেকে বাংলাদেশকে ন্যুনতম জলসবরাহের ৩০ বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ২ রাষ্ট্রপ্রধান। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে দু’দেশের মধ্যে গঙ্গার জল ভাগাভাগি হবে। যে কোনও সঙ্কটকালীন সময়ে ৩৫ হাজার কিউসেক জলের নিশ্চয়তা পাবে বাংলাদেশ। 


আর সেই জল বাংলাদেশে পৌঁছতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফরাক্কা ব্যারাজ। যে কারণে এই চুক্তি ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তি নামেও পরিচিত। আর এখানেই শুরু রাজনৈতিক জটিলতার। কারণ,
২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ফারাক্কা ব্যারেজের কারণে মুর্শিদাবাদ ও মালদার বিস্তীর্ণ এলাকায় তীব্রতর হচ্ছে ভাঙন। নষ্ট হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ সম্পত্তি ও চাষের জমি। এমনকী, ২০১৭ সালে ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও। এরপরও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই কেন্দ্র গঙ্গা জলচুক্তি পুনর্নবীকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে তৃণমূল। 


তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এমন কিছু সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ একতরফাভাবে নেওয়া হচ্ছে, যেটা সম্পূর্ণভাবে আমরা মনে করি এটা বাংলাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। যেকোনও বিষয়, বাংলাদেশের সঙ্গে যদি এই নদীগুলোকে নিয়ে কোনওকিছু আলোচনা করতে হয়, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীকে অবশ্যই এই আলোচনার মধ্যে রাখতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। আমরা সেই সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। কিন্তু বাংলাকে জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা কোনওরমক চুক্তিকে সমর্থন করি না। করবও না।) 


সোমবার শুরু হচ্ছে সংসদের অধিবেশন। সেখানে তৃণমূলের তরফে উঠে আসতে পারে গঙ্গা জলচুক্তির প্রসঙ্গও।


আরও পড়ুন: বড়া পাও বেচে দিনে ৪০ হাজার টাকা আয়! ইনি কে জানেন?