মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবাশিস মৌলিক, দীপক ঘোষ, কলকাতা: আজ দুর্গাপুরে জোড়া সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। তার জন্য প্রস্তুতিও রয়েছে জোরকদমে। এরই মধ্যে আবার দিলীপ ঘোষ নিজেই জানিয়ে দিলেন, মোদির সভায় তিনি থাকছেন না। এদিকে বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি মোদির সভায় আসার জন্য দুর্গাপুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করে এলেন আমন্ত্রণপত্র। যে আমন্ত্রণপত্রের কয়েকটি শব্দ আলাদা করে নজর কেড়েছে রাজনৈতিক মহলের। এদিকে আগামীকাল রাজ্যে আসার আগে সোশাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী পোস্ট করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের অপশাসনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যা নিয়ে পাল্টা নিশানা করেছে তৃণমূল। 

আরও পড়ুন, শর্তসাপেক্ষে ২১ শে জুলাই শুভেন্দুর মিছিলের অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট

বুধবার রাজপথে নেমেছিলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়!আর শুক্রবার দুর্গাপুরে সভা করবেন নরেন্দ্র মোদি। জমজমাট মেগা রাজনৈতিক সপ্তাহ! প্রধানমন্ত্রীর সভা ঘিরে বিজেপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্য়ে প্রবল উৎসাহ। কিন্তু সভার প্রাক মুহূর্তে মন পরিবর্তন করলেন দিলীপ ঘোষ। জানিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদির সভায় তিনি উপস্থিত থাকছেন না। প্রধানমন্ত্রীর সভায় বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য় সভাপতিকে আমন্ত্রণ জানায়নি দলের রাজ্য় নেতৃত্ব। তবে জল্পনা চলছিল, কর্মীদের অনুরোধে দর্শকাসনে থাকতে পারেন তিনি। তবে শেষ মুহূর্তে দিলীপ ঘোষ জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর সভায় তিনি থাকছেন না। কারণ দলীয় নেতৃত্বকে তিনি অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছেন না। এর আগে নরেন্দ্র মোদির আলিপুরদুয়ারের সভাতেও আমন্ত্রিত ছিলেন না দিলীপ ঘোষ।সদ্য় নির্বাচিত রাজ্য় সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা যায়নি।পরে অবশ্য় দলীয় অফিসে গিয়ে শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছিলেন দিলীপ ঘোষ। ফলে তাঁর মূল স্রোতে ফেরা নিয়ে জল্পনা চলছিল। কিন্তু শেষ অবধি নরেন্দ্র মোদির সভায় উপস্থিত থাকছেন না তিনি। শুক্রবার দুর্গাপুরে জোড়া সভা করবেন নরেন্দ্র মোদি। 

 শুক্রবার দুপুর ২ টো ৩৫-এ অন্ডাল বিমানবন্দরে নামবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে গাড়িতে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে নেহেরু স্টেডিয়ামে পৌঁছবেন তিনি। সেখানে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন তিনি। এরপর পাশের মঞ্চেই রাজনৈতিক সভা করবেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর সভার একদিন আগে সেখানে পৌঁছে গেছেন নব নির্বাচিত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। মোদির সভায় সভায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে দুর্গাপুরের পলাশডিহায় বাড়ি বাড়ি কার্ড বিলি করেন তিনি। অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, আমন্ত্রণপত্রের ওপরে একই সারিতে লেখা, ভারত মাতার জয়, জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী। তাহলে কি মা দুর্গা-মা কালীর মাধ্য়মে বাঙালি মন জয়েরই চেষ্টা করছেন বিজেপির নতুন রাজ্য় সভাপতি? রাজনৈতিক কৌশল হিসাবেই কি জয় শ্রীরাম স্লোগান অপেক্ষা, মা দুর্গা-মা কালীর দিকে ঝুঁকছে রাজ্য় বিজেপি? 

 সভা উপলক্ষ্য়ে সোশাল মিডিয়ায় নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের অপশাসনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মানুষ অনেক আশা নিয়ে বিজেপির দিকে তাকিয়ে আছেন এবং তাঁরা নিশ্চিত যে একমাত্র বিজেপিই পারবে উন্নয়ন করতে। ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে একটি জনসভায় ভাষণ দেব। যোগদান করুন। 'প্রধানমন্ত্রীর সভার ঠিক আগের দিন আক্রমণ শানিয়েছেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল সাংসদ। যা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বর্ধমান-দুর্গাপুর তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কীর্তি আজাদ বলেন, পশ্চিম বাংলার সঙ্গে আপনি(মোদি) বিমাতৃসুলভ আচরণ করেন। এইজন্যই না? যে পশ্চিম বাংলার মানুষ আপনাকে ফিরিয়ে দেয়? কাল দুর্গাপুর আসুন, অন্তত সত্যিটা বলুন। মিথ্যে বলবেন না। কারণ আপনার জুমলা আর আপনার স্বভাব লোক জেনে গেছে। বিজেপিকে জেনে গেছে।'

বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'দেখুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এত বছর ১৫ বছর হতে চলল, একটা প্রতিশ্রুতিতে উনি কাজ করেননি। প্রত্যেকটা জিনিস ফেলিওর হয়েছে। সেখানে তাঁর এই সাংসদের এইসব কথা আমার মনে হয় মুখে মানায় না। আর উনি তো বাইরের লোক। উনি তো জানেনই না। উনি বাংলা ভাষাটাই জানেন না। উনি কী করে জানবেন বাংলায় কী হচ্ছে? বাঙালি অস্মিতাকে সামনে রেখে পথে নেমেছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে। এবার পাল্টা নরেন্দ্র মোদি কী বলেন, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।