কলকাতা : পয়লা বৈশাখ। নতুন বছর , নতুন ইনিংস, নতুন ভাবনা। আসলে নতুন কিছু শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক আশা প্রত্যাশা জড়িয়ে থাকে তাকে ঘিরে। ঠিক যেমনটা হয়, কর্মজীবনের শুরুতে । হয়ত অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে মনে পড়ে যায় কাজ- জীবনের সেই পয়লা দিনগুলোর কথা। কিছু মুহূর্তের কথা। কিছু সাক্ষাতের কথা। ফিরে যায় মানুষ কোনও বিশেষ সময়ে। ১৪২৯ সালের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে এবিপি লাইভের সঙ্গে এমন কিছু পুরনো স্মৃতির কথা ভাগ করে নিলেন বিশিষ্টরা। 
এবিপি লাইভের সঙ্গে আলাপচারিতায়  ডাক্তারি জীবনের শুরুর দিকের স্মৃতির কোলাজ করলেন  শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার । তাঁর মধ্যে বেশি করে তাঁর মনে পড়ে গেল, এসএসকেএম হাসপাতালে ব্রেস্ট ক্যানসার ক্লিনিক শুরুর পয়লা সে সময়ের কথা। 



ডা. সরকার স্মৃতিতে পিছু হেঁটে বললেন, ব্রেস্ট ক্যানসারের কাজের জন্য আজ দেশ ও বিদেশে ছোটাছুটি করতে হয়। মিলেছে বহু স্বীকৃতি। তার মূল্য অপরিসীম। Association of Breast surgeons of India র প্রেসিডেন্ট তিনি। Mayo Clinic এর প্রফেসরশিপ কিংবা আইসিএমআর- এর স্পেশ্যালিস্ট গ্রুপে থাকা কিংবা বাংলাদেশের রিসোর্স পার্সন  হিসেবে কাজ করা, কেরিয়ারে একের পর এক মনে রাখার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একটি ঘটনা এই সব মাইলস্টোনের থেকে বেশি মন গেঁথে থাকার মতো।  

ডা. সরকারের কথায়,  যখন কাজ শুরু করি, তখন স্তন ক্যানসারের কোনও সাব স্পেশ্যালিটি ছিল না। সেটা ২০০০ সাল। এসএসকেএম হাসপাতালে বিশেষ ব্রেস্ট ক্যানসার ক্লিনিক শুরু করেন তিনি। ক্রমেই বেড়ে চলেছে তখন স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের ঘটনা। কিন্তু পেশেন্টদের থেকে সাড়া পাচ্ছেন কই। দিনের পর দিন , সকাল থেকে সন্ধে অপেক্ষা করার পরও রোগীর দেখা নেই। তিন সপ্তাহ কেটে যায় এভাবেই। ভাবছিলেন, তবে কি বন্ধই করে দেবেন ব্রেস্ট ক্যানসার ক্লিনিক ? নিজেকে কেমন হাস্যস্পদ মনে হচ্ছিল। "


ঠিক সেই সময় ...যখন ভাবছি বন্ধই করে দেব তখন এক মহিলা এলেন । নামটা এখনও মনে আছে। সন্ধ্যা নাগ। মেদিনীপুরের প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষিকা তিনি। বয়স ৫০ পেরিয়েছে।  স্তনে একটি টিউমর ছিল। টেস্ট করে দেখা গেল ক্যান্সারাস। চিকিৎসা শুরু হল। আমি তাঁকে মা বলে ডেকেছিলাম। তিনি আমার উপর বড় ভরসা করে বলেছিলেন, ' আমার ছেলে আমার অপারেশন করছে, আমি সুস্থ হবই' 
West Bengal Medical Education service এর মাধ্যমে নব নিয়োজিত সেই তরুণ চিকিৎসকের কাছে সেই কথাগুলোর মূল্য ছিল অপরিসীম। 

অপারেশন হল ওঁর। ভাল হয়ে বাড়ি ফিরলেন। পরে একদিন আউটডোরে দেখা করতে এসেছিলেন। হাতে ছোট্ট একটা কৌটো। তার মধ্যে লাল-লাল নারকেল নাড়ু। এটা ছিল তাঁর 'ছেলে'কে দেওয়া সবথেকে আন্তরিক উপহার। আজও চোখ জল আসে । সেটাই ছিল আমার স্তন ক্যান্সার নিয়ে কাজ করার সাফল্য ও অনুপ্রেরণা। সন্ধ্যা নাগ আরও ১০ বছর ভালভাবে বেঁচে ছিলেন। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে চলে যান তিনি। ওঁর সঙ্গে পরবর্তীতে আরও অনেকেই এসেছিলেন চেক আপ করাতে। সন্ধ্যা নাগের সেই হাসি ও হাতে গড়া নাডুর স্বাদ আর আন্তরিকতা কখনও ভুলব না।