ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, সমীরণ পাল এবং সুজিত মণ্ডল, কলকাতা, নদিয়া: 'আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে, হুমকি দিয়ে ওরাই মেয়ের মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গেছিল', ধৃত তৃণমূল (TMC) নেতার ছেলের বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন হাঁসখালির (Hanskhali) নির্যাতিতার বাবা। অন্যদিকে তদন্তভার নেওয়ার পর FIR দায়ের করল CBI। কলকাতা (Kolkata) থেকে গেল বিশেষ দল।
কীভাবে ডেথ সার্টফিকেট (Death Certificate) ছাড়াই হাঁসখালিকাণ্ডে মৃতার শেষকৃত্য করা হয়েছিল? নেপথ্যে কারা?
এই প্রশ্ন ঘিরেই এখন জোর জল্পনা। এই আবহে হাঁসখালিকাণ্ডে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরাই মৃতদেহ তুলে শ্মশানে নিয়ে চলে গিয়েছিল’। অভিযোগের সুরে বলেন, "মেয়ে মারা যাওয়ার পর আধ ঘণ্টা টাইম দেয়নি, নিয়ে গেছে। বাড়িতেই ছিলাম। প্রশ্ন-বাধা দেননি? উত্তর- বাধা দেব কী করে? সব মেশিন নিয়ে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বুকে ঠেকিয়ে দিচ্ছে, গুলি করে মেরে দেব তোকে। চিনি একজনকে। তিনি ব্রজ গয়ালি।"
আরও পড়ুন, মাটি ফুঁড়ে আচমকাই অবির্ভূত দেবীমূর্তি, ভক্তিভাবে নতজানু গোটা গ্রাম, তার পর...
এখানেই শেষ নয়, হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে গেলেও পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। নির্যাতিতার বাবা বলেন, "হুমকি দিয়ে যায় যে, যদি কোনও ডাক্তারের কাছে যাস, কী হাসপাতালে যাস, তোকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মেরে দেব।" নাবালিকার মৃত্যুর ৫ দিন পর পুলিশকে কেন খবর দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
যার উত্তর দিলেন মেয়ে হারা বাবা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ এপ্রিল বলেছিলেন, "৫ তারিখ মৃত্যু, পুলিশ জানে ১০ তারিখ। যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে ৫ তারিখ অভিযোগ জানালেন না কেন?" নির্যাতিতার বাবা বলেন, "মেয়ে মারা যাওয়ার পর থানায় যেতে দেয়নি আমাদের। হুমকি দিয়ে গেছে। আমাদের যেতে দেয়নি, ভয়তে। যে থানায় গেলেই রাস্তায় মেরে ফেলে দেব তোদের। গুলি করে মেরে ফেলে দেব রাস্তায়।"
সরব বিরোধীরা
হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর দাবি নির্যাতিতার বাবার। বিরোধীরাও সরব হয়েছে। এদিকে তৃণমূলও জবাব দিয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, তৃণমূলের আমলে বাংলা ধর্ষকদের স্বর্গরাজ্য। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, "দেশের যে প্রান্তেই এই ঘটনা ঘটুক না কেন, সমালোচনার যোগ্য, প্রতিবাদ করা উচিত। কিন্তু প্রতিবাদ-সমালোচনার নাম করে অনেকই রাজনৈতিক সুবিধা লাভের চেষ্টা করছে, ততটাই নিন্দনীয়।"
তদন্তে সিবিআই
এদিকে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে হাঁসখালিকাণ্ডের তদন্তভার নিয়েছে CBI। গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় FIR দায়ের করেছে তারা। FIR-এ নাম রয়েছে শুধুমাত্র তৃণমূল নেতার ছেলে, ধৃত ব্রজ গয়ালির। খুন, গণধর্ষণ, প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ও পকসো আইনে মামলা রুজু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সব মিলিয়ে হাঁসখালি গণধর্ষণকাণ্ড ঘিরে উত্তাল রাজ্য ও রাজনীতি।