সঞ্চয়ন মিত্র, ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা: ইউনেস্কোর স্বীকৃতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে, বৃহস্পতিবার জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড পর্যন্ত, বর্ণময় শোভাযাত্রা হয়েছে কলকাতায়। তাতে উপচে পড়েছিল ভিড়। এই শোভাযাত্রা নিয়েও শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক তরজা। 


কেন তরজা?
গোটা শোভাযাত্রাটি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে হয়েছে। যার পরেই এই অনুষ্ঠানের খরচ নিয়ে, শাসক শিবিরকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, যেখানে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা (DA) বকেয়া, সরকারি চাকরিতে বহু শূন্য পদ রয়েছে, সেখানে এমন একটি অনুষ্ঠানে এত খরচের কী যুক্তি রয়েছে?


বৃহস্পতিবার কলকাতায় শাঁখ বাজিয়ে, ঢাকের বোলে বিপুল বড় শোভাযাত্রা হয়েছে। যেখানে প্রথম সারিতেই ছিলেনম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন একাধিক মন্ত্রী, বিধায়ক এবং কাউন্সিলর। এই শোভাযাত্রা উপলক্ষে রেড রোডে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলার একাধিক বিশিষ্টজন। বাংলার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর (UNESCO) স্বীকৃতি উদযাপন করতেই এই বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বাংলার সিনেমা-টেলি জগতের একাধিক তারকা। উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। পায়ে পায়ে দীর্ঘ পথ পেরিয়েছে এই মিছিল। একাধিক জায়গা ঘুরে রেড রোডে এসে শেষ হয় ওই মিছিল। অংশ নিয়েছিল একাধিক সংগঠন এবং ক্লাব। সাজানো হয়েছিল বহু ট্যাবলো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আজ থেকে পুজো শুরু হয়ে গেল। ঢাকের বাদ্যি বেজে গেল। আনন্দের মধ্যে দিয়ে পুজো শুরু হয়ে গেল। যেমন করে পারুন আনন্দ করুন। মনটাকে খুশি রাখুন। মনটাকে ভাল রাখুন।'


নিয়োগ-তরজা:
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ঘিরে একদিকে যখন তিলোত্তমা রঙিন হয়ে উঠল, তখন এত টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, স্কুলে শিক্ষকের চাকরির দাবিতে, তরুণ-তরুণীরা একবছরেরও বেশি সময় ধরে রাস্তায় আন্দোলন চালাচ্ছে। নিয়োগ নিয়ে আরও একাধিক অভিযোগ উঠেছে।


ডিএ-অভিযোগ:
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা নিয়েও বারবার অভিযোগ উঠেছে। এই রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ডিএ- কেন্দ্রের তুলনায় অনেক কম। প্রায় ৩১ শতাংশ ডিএ বকেয়া। নবান্ন সূত্রে দাবি, সরাসরি রাজ্য সরকারি চাকরির প্রায় ৪ লক্ষ পদ ফাঁকা রয়েছে। স্কুল, কলেজে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে না।


বিরোধীদের খোঁচা:
এই পরিস্থিতিতে বর্ণাঢ্য মিছিলে এত খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'মিড ডে মিল দিতে পারছে না। ওষুধ দিতে পারছে না। রাস্তা সারানোর পয়সা নেই। আর শোভাযাত্রা করছে রাজনৈতিক স্বার্থে।' সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'চাকরি প্রার্থীরা রাস্তায় বসে আছে। সরকারী কর্মচারীরা ডিএ-এর জন্য বসে আছেন। তাঁদের পরিবারকে দিচ্ছেন না। তার বদলে কোর্টে যাচ্ছেন।'


আর কদিন পরেই পুজো। তার আগে শোভাযাত্রা নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।


আরও পড়ুন: ভারতে তৈরি প্রথম যুদ্ধবিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, আজ যাত্রা শুরু INS Vikrant-এর