সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: পরেশ-কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর (Ankita Adhikary) চাকরির জায়গা এখনও ফাঁকা, ৪ মাস পরেও চাকরি পাননি অনামিকা রায়। সেই মামলায় আগামীকাল বেলা ১২টার মধ্যে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ জানিয়েছেন, 'কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট অসম্পূর্ণ? রিপোর্টে জানাতে হবে শিলিগুড়ি কমিশনারেটকে।' আদালতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, 'পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট অসম্পূর্ণ থাকায় নিয়োগ পত্র দেওয়া যায়নি।' এর পরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বলেন, 'কোন থানা রিপোর্ট দিচ্ছে না? জানতে চাই। যদি পুলিশ বিরূপ রিপোর্ট দেয়, তা হলে আমি আরও একটা তদন্তের নির্দেশ দেব।' সঙ্গে আরও মন্তব্য, 'ইনি চাকরিপ্রার্থী, জঙ্গি তো নন। আসল জঙ্গি এলে তো পালিয়ে যাবে। অনন্তনাগে পাঠিয়ে দেব।'
প্রেক্ষাপট...
২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২ মে সেই পরীক্ষার ফল বেরোয়। অভিযোগ, SSC-র প্রথম তালিকায় অঙ্কিতা অধিকারীর নামই ছিল না। ২০ নম্বরে নাম ছিল ববিতার । এর পর যখন নতুন করে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয় এসএসসি-র তরফে, তাতে নিজের নাম ২১ নম্বরে দেখতে পান ববিতা। বস্তুত, তাঁরই করা মামলার জেরে স্কুল শিক্ষিকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতাকে। পাশাপাশি তাঁকে দুই কিস্তিতে ৪১ মাসের বেতন ফেরতেরও নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু পরে নম্বর-বিভ্রাটের জেরে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়ের নির্দেশেই চাকরি খোয়ান ববিতা সরকার! তাঁর জায়গায় চাকরি পেলেন মেধা তালিকায় নাম থাকা, পরবর্তী দাবিদার, অনামিকা রায়। তিন সপ্তাহের মধ্য়ে তাঁর চাকরির নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। অঙ্কিতা অধিকারীর বেতনের যে ১৬ লক্ষ টাকা ববিতা পেয়েছিলেন, সেটার পুরোটাই পাওয়ার কথা ছিল অনামিকা রায়ের। গত মে মাসে, এমনই নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেছিলেন, 'স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছেন ববিতা। তাই বেশি নম্বর দিয়েছে কমিশন। সেই কারণেই, ববিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ।'
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে, কয়েক মাস আগে, হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরিপ্রার্থীদের নম্বরের তালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। আর তারপরই, প্রকাশ্যে আসে ববিতার নম্বর-বিভ্রাট! চাকরিপ্রার্থী অনামিকা দাবি করেন, ফর্ম ফিলাপের সময় ববিতা লিখেছিলেন, তিনি স্নাতক স্তরে ৮০০ র মধ্যে ৪৪০ পেয়েছেন। অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ। কিন্তু, ফর্মে লেখা তিনি ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ববিতার উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, 'আপনি ভুল করেছেন। আপনাকে শাস্তি পেতে হবে। আপনার উদ্দেশে আমি কড়া পদক্ষেপ করতে পারতাম, কিন্তু নিচ্ছি না।' এরপরই মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ববিতার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয় আদালত। এবং কাউন্সেলিং-এর পর, অনামিকা রায়কে সুপারিশপত্র দেওয়ার জন্য় নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। কিন্তু সেপ্টেম্বর হয়ে যাওয়া সত্ত্বে তাঁর চাকরি হয়নি। এমন কেন? এবার রিপোর্ট তলব।