আলিপুরদুয়ার, অরিন্দম সেন: চলন্ত ট্রেনে প্রসব বেদনা। কোনও স্টেশনের হাসপাতাল অবধি নিয়ে যাওয়ারও সময় হল না। চলন্ত ট্রেনেই পৃথিবীর আলো দেখল ছোট্ট শিশু। রেলের আরপিএফের তত্ত্বাবধানে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ।
বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি থেকে আলিপুরদুয়ার জংশনগামী সিকিম-মহানন্দা এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন অসমের কোকরাঝার জেলার চৌতারার বাসিন্দা আমিরুন বেগম । সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী রিজাউল শেখ। দিল্লিতে দিনমজুরের কাজ করেন ওই দম্পতি। বছর চারেকের কন্যাকে নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে দিল্লিতেই ছিলেন তাঁরা।
৯ মাসের সন্তানসম্ভবা ছিলেন আমিরুন। ডাক্তার দেখিয়েছিলেন, হয়েছিল প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। দম্পতির দাবি আগামী মাসের ৭ তারিখ নাগাদ প্রসবের আনুমানিক সময় জানিয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগেই ট্রেনে প্রসব বেদনা ওঠে তাঁর।
আমিরুনের স্বামী জানালেন, কিছুদিন ধরে দিল্লিতে প্রচন্ড ঠাণ্ডায় কষ্ট পাচ্ছিলেন সন্তানসম্ভবা স্ত্রী। কাজও তেমন ছিল না। তাই বুধবার বাড়ি ফেরার জন্য দিল্লি থেকে আপ মহানন্দা এক্সপ্রেস ধরেন তাঁরা। সকাল ৭-৩৫ মিনিটে ছাড়ে ট্রেন। সঙ্গে ছিলেন চেনা পরিচিত মহিলারাও। কিন্তু ট্রেনের ঝাঁকুনিতে হঠাৎ কষ্ট হতে শুরু করে তাঁর। ওঠে প্রসব বেদনা ।
ট্রেন তখন শিলিগুড়ি পেরিয়ে ডুয়ার্সের চালসা স্টেশনের কাছাকাছি । ব্যথা বেড়ে চলেছিল। কর্তব্যরত টিটি এবং আরপিএফ-কে জানানো হয়। খবর যায় রেলের সিকিউরিটি কন্ট্রোলেও। কিন্তু অপেক্ষার সময় ছিল না। চালসা-নাগরাকাটা স্টেশনের মাঝেই মহিলা সহযাত্রীদের সহযোগিতায় চলন্ত ট্রেনের কামরাতেই আমিরুন জন্ম দেন সন্তানের ।
এর পরেই ট্রেন থামে দলগাঁও স্টেশনে। সেখানে মহিলা আরপিএফ চিকিৎসক-দল নিয়ে হাজির হন। তাঁদের তত্ত্বাবধানে সদ্যজাত শিশুসহ মা-কে আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। তারপর রেলওয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে চাইলেও ওই দম্পতি নাকি রাজি হননি, খবর রেলসূত্রে।
রেলওয়ের সহযোগিতায় খুশি ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী। মায়ের নাম আমিরুনের সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের নাম রাখা হয়েছে আরিয়ান। মা ও শিশু দুজনেই ভাল আছে, জানিয়েছে পরিবার। পেশায় দিনমজুর ওই দম্পতির আশঙ্কা, হাসপাতালে ভর্তি হলেই আরও কিছুদিন রোজগার আটকে যাবে, তাতে সমস্যা বাড়বে। ফলে তাঁরা আবার অন্য ট্রেন ধরে রওনা হন অসমের পথে।
আরও পড়ুন :
নতুন বছর শুরুর আগে বড় খবর ! অনেকটা কমে গেল রান্নার গ্যাসের দাম