অমিত জানা, সবং (পশ্চিম মেদিনীপুর): মসলন্দি মাদুরের উপর কারুকার্য ফুটিয়ে তুলে জাতীয় স্তরের সম্মান লাভ। নিজেদের সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাচ্ছেন সবংয়ের দুই গৃহবধূ।


মসলন্দি মাদুরের উপর কারুকার্য ফুটিয়ে তুলে সবংয়ের দুই গৃহবধূ তথা মাদুরশিল্পী রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে চলেছেন। এর আগেও সবংয়ের ৮ জন শিল্পী এই পুরস্কার পেয়েছেন। মহিলাদের মধ্যে ১৯৯২ সালে প্রথম এই পুরস্কার পান 'হোমমেকার' পুষ্পরানি জানা। আর তার বছর ৪০ পর প্রথম পুরস্কার পাচ্ছেন আরও দুই গৃহবধূ। 


সবংয়ের ২ লক্ষ ৯২ হাজার বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ মাদুর শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এই শিল্পীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই মহিলা। তাঁদের একটা অংশ যেমন মাদুর কাঠির চাষ করেন, তেমন একটা অংশ মাদুর বোনার কাজ করেন। অপর একটি অংশ মাদুর বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। এমনিতেই সবংয়ের মাদুরের নাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানকার যে কোনও কর্মসূচিতে অতিথিদের সম্মান জানানোর জন্য এই মাদুরকেই বেছে নেওয়া হয়। আর সেই কাজের জন্যই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাচ্ছেন গৌরী জানা ও গৌরী বালা দাস।        


রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়ার খবরে স্বভাবতই দুই পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি খুশি বাকি মাদুর শিল্পীরাও। ওই দুই পরিবারই সারতার বাসিন্দা। তবে গৌরী জানা এখন ডেবরার পশ্চিম বেগুনি গ্রামে থাকেন। তাঁর স্বামী তাপস জানা মসলন্দির উপর মহাভারতের কাহিনি ফুটিয়ে তুলে ২০১৬ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। এবার স্ত্রীও সেই একই পুরস্কারে ভূষিত হতে চলেছেন। তিনি একটি মাদুরে সীতার অগ্নিপরীক্ষার কাহিনি ফুটিয়ে তুলে এই পুরস্কার পাচ্ছেন। অপরদিকে গৌরী বালা দাস মাদুরের উপর ফুটিয়ে তুলেছেন গ্রাম বাংলার বাউল শিল্পীদের কাহিনি। আবার কোনওটায় সরু সরু মাদুরের কাঠি দিয়ে নানান কারুকার্য করা। 


সারতার বাড়িতে বসেই মাদুর দিয়ে তৈরি নানান কারুকার্য করা হস্তশিল্প দেখান গৌরী বালা দাস। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি মাদুর তৈরি করা শিখেছেন। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে এসেও শাশুড়ি মায়ের কাছে শিখেছেন। এই পুরস্কার পেয়ে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত ও খুশি। গ্রামবাসী কমলেশ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, 'গ্রামের দুজন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাচ্ছেন মাদুর শিল্পের জন্য। পাড়া প্রতিবেশী হিসেবে আমরা খুব খুশি। সরকার যদি এই সমস্ত বিষয়ে একটু নজর দেন তাহলে আরও মানুষ মাদুর শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে ইচ্ছুক হবেন।' তাঁর কথায়, ওই এলাকায় অনেকেই খুব ভাল মাদুর বোনেন। 


সবংয়ের বিডিও তুহিন শুভ্র মহন্তীর কথায়, 'সবংয়ের মাদুরের শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর বা পশ্চিমবঙ্গে নয়, দেশে-বিদেশে সুখ্যাতি রয়েছে। গৌরী জানা ও গৌরী বালা দাস সবংয়ের এই মাদুর শিল্পকে গোটা ভারতবর্ষের বুকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। সবংয়ের একজন আধিকারিক এবং বর্তমান বাসিন্দা হিসেবে খুবই গর্ববোধ হচ্ছে।'


২০১৮ সালে মনোনীত হয়েছিলেন ওই দুই মাদুরশিল্পী। তবে করোনার আবহে আটকে যায় সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া। ২০২১ সালে এসে তাঁরা পুরস্কার পাচ্ছেন। পরিবার পরিজন, প্রতিবেশী সকলেই খুশি সেই খবরে।