কলকাতা: মামলা হয়েছিল, নিষ্পত্তি হয়নি। মামলাকারী প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। এবার তাঁর নামেই প্রাথমিকের নিয়োগপত্র (Primary Recruitment Letter) এল বাড়িতে। শেষ নয় এখানেই। এমন আরও বহুজনের নামেই নিয়োগপত্র প্রকাশিত হয়েছে যাঁরা ইতিমধ্যেই ষাট পেরিয়ে গিয়েছেন। ১ জন নয়, তালিকায় এমন ৪ জন রয়েছেন যাঁদের মৃত্যুর পরে প্রাথমিক স্কুলে চাকরির নিয়োগপত্র প্রকাশ হয়েছে। অন্যদিকে ষাটোর্ধ্ব ৬২ জন পেয়েছেন প্রাথমিক স্কুলে চাকরির নিয়োগপত্র।
৪ দশক পর চাকরির চিঠি! মামলার পর কেটে গিয়েছে ৪ দশক। সেই চাকরির নিয়োগপত্র মিলল ২০২৪-এ! শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) নিয়ে যখন তোলপাড় রাজ্য। তখনই প্রাথমিক সংসদের নিয়োগপত্র নিয়ে এমন ঘটনায় কার্যত হতবাক সকলেই। ঠিক কী হয়েছিল? প্রশিক্ষণের পরেও চাকরি না পাওয়ায় ১৯৮৩ সালে মামলা করেছিলেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। সেই মামলার নিষ্পত্তির পর প্রাথমিক স্কুলে চাকরির নিয়োগপত্র মেলে ২০২৪ সালে। হুগলি জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এহেন নিয়োগপত্র নিয়ে চাঞ্চল্য় ছড়িয়েছে ইতিমধ্যেই।
নিয়োগপত্রে নাম দেখে হতবাক! সাতসকালে এমন খবরে কার্যত চোখ কপালে উঠেছে নিয়োগপত্রে নাম থাকা ব্যক্তিদেরও। নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে অনেকেই খোঁজ নিলেন স্কুলে। কেউ আবার গেলেন সার্কেল অফিসে। এ প্রসঙ্গে, হুগলি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বলেছেন, 'যা বলার পরে বলব'। অন্যদিকে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের দাবি, 'আদালতের রায় কার্যকর করা হয়েছে'। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, '২০২৩-এর ২০ ডিসেম্বর মামলাকারীদের চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই মত ২০২৪-এর ৮ অগাস্ট থেকে নিয়োগপত্র কার্যকর হয়। এই ঘটনায় বিরোধীদের কটাক্ষ, 'এটাই রাজ্যের শিক্ষা দফতরের হাল, মৃতকেও নিয়োগপত্র নিয়ে'।
'চাকরি মেলেনি বাম আমলে'! কয়েক দশক পর তাদের জন্য এল চাকরির নিয়োগপত্র! প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও প্রাইমারি স্কুলে চাকরি মেলেনি বাম আমলে! সুরাহা পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। তবে ফল পাওয়ার অপেক্ষাতেই কেটে গেছে জীবনের অধিকাংশ সময়। এখন সকলেই অবসরের বয়স পেরিয়ে গিয়েছেন। কারও আবার মৃত্যুও হয়েছে। এবার তাঁদের নামেই এল প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগপত্র। যা ঘিরে কার্যত শোরগোল পড়ে গিয়েছে হুগলিতে।
কী বলছেন নিয়োগপত্র পাপকরা? শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। তৃণমূলের আমলে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগে শ্রীঘরে গিয়েছেন তাবড় নেতা মন্ত্রী। জেলে ঠাঁই হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীসহ একাধিক তৃণমূল বিধায়ক,শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের। এই প্রেক্ষাপটে হুগলির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তরফে ৬৬ জনের নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়। তবে এই অভিযোগ বাম আমলের। পান্ডুয়া বাসিন্দা দীনবন্ধু ভট্টাচার্যের দাবি, 'সে সময় বামফ্রন্ট সরকার ছিল। আমরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছিলাম। চাকরি পাইনি। পরে প্যানেল বাতিল হয়ে যায়।এখন শিক্ষা সংসদ থেকে নিয়োগ পত্র পেয়েছি। কি করে হল জানি না'।
আরও এক নিয়োগপত্রপ্রাপক অচিন্ত্য আদকের প্রশ্ন, 'আমরা ৮৩ সালে মামলা করেছিলাম। এখন চাকরি কী করে দিল জানি না। ষাট বছরে তো অবসর হয় আর এই বয়সে কি করে চাকরি করব?'
এবিটিএ কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহন পণ্ডিতের কথায়, 'সারা ভারতবর্ষে এই ধরনের ঘটনা হয়নি। অবসরের বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর চাকরির নিয়োগ পত্র দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে তারা এফেক্ট পাবেন।চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরই চাকরি চলে যাবে। এবং পঞ্চাশ লাখ টাকা করে পাবে।এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা।আমরা তদন্ত চাই বিষয়টার সত্য উদঘাটিত হোক'।
আরও পড়ুন: CUET PG 2024: কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তির নয়া আপডেট, কী জানাল NTA ?