সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায়, পার্থপ্রতিম ঘোষ ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আদালতে ঝুলে রইল চন্দ্রনাথ সিংহর ভাগ্য। কারামন্ত্রীকে সাত দিনের জন্য হেফাজতে চাইল ইডি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, নথি চাওয়া হলেও তা সময়ে পাঠাননি চন্দ্রনাথ সিংহ। চার্জশিটের পর তড়িঘড়ি নথি জমা দেন। বোঝাই যাচ্ছে উনি কতটা প্রভাবশালী। পাল্টা চন্দ্রনাথ সিংহর আইনজীবীর বক্তব্য, ইডি বেশকিছু তথ্য চেয়েছিল, যা কম সময়ে দেওয়া যায় না।
কারামন্ত্রীর কি কারাবাস হবে? নাকি জামিন পাবেন? শনিবার এই বিষয়টির দিকেই নজর ছিল রাজ্যবাসীর। তবে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়, চন্দ্রনাথ সিংহর বিরুদ্ধে ED-র বিশেষ আদালতে শুনানি শেষ হলেও, রায় ঘোষণা হবে মঙ্গলবার দুপুর দুটোয়। এদিক আদালতের বাইরে বেরিয়ে কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, 'আমার বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ছিল। আস্থা আছে। ভবিষ্যতেও আস্থা থাকবে।'
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে, চন্দ্রনাথ সিংহের বিরুদ্ধে চার্জশিটে প্রায় ১৩ কোটি টাকার বেআইনি আর্থিক লেনদেনের দাবি করেছে ED. এদিন শুনানির শুরুতেই, কারামন্ত্রীকে হেফাজতে পাওয়ার জন্য় জোরদার সওয়াল করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। চন্দ্রনাথ সিংহকে প্রভাবশালী বলেও কোর্টে দাবি করেন ইডির আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী।
গতবছর (২০২৪) চন্দ্রনাথ সিংহর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় ৪১ লক্ষ টাকা। বাজেয়াপ্ত করা হয় মোবাইল ফোন। একাধিকবার সমন পাঠানো হয় কারামন্ত্রীকে। ৪১ লক্ষ টাকার উৎস জানতে চাওয়া হয়েছিল। এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হেফাজতে নেওয়া অত্য়ন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি ইডির আইনজীবী এও বলেন, চন্দ্রনাথ সিংহর তরফে দাবি করা হয়, ওই বিপুল টাকা কৃষিকাজ ও অন্য়ান্য় রোজগার থেকে এসেছে। বলেছিলেন চাষ ও ফলনের থেকে পাওয়া। কিছু টাকার হিসেব দেখাতে পেরেছেন তাঁরা। কিন্তু সবটা নয়। বয়ান রেকর্ডের সময় প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে পারেননি চন্দ্রনাথ সিংহ। সে সম্পর্কে বিশদে জানতে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
ইডির আইনজীবী আরও দাবি করেন, চন্দ্রনাথ সিংহর নামে যে আয়কর জমা দেওয়া হয়েছিল, তাতেও একাধিক লেনদেন বা টাকার উৎস অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। জমি সংক্রান্তও একাধিক তথ্য পাওয়া গেছে। এদিন আদালতে ইডির আইনজীবী দাবি করেন, চন্দ্রনাথ সিংহ বলেছিলেন, তাঁর চাষবাস ও রিয়েল এস্টেট থেকে টাকা এসেছে, যা সন্দেহজনক। আমার এ সংক্রান্ত নথি পাইনি। উনি দেখাতে পারেননি। আমরা আরও নগদ লেনদেনের হদিশ পেয়েছি। তার জন্য হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। যে যে নথি পাওয়া গেছে, তা চন্দ্রনাথ সিংহর হেফাজত হওয়ার জন্য় যথেষ্ট। উনি শুধু প্রভাবশালীই নন, রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী। কারণ, চার্জশিট জমা দেওয়ার আগে তিনি কোনও নথিই দিচ্ছিলেন না। এর থেকেই বোঝা যায় তাঁর প্রভাব কতটা।
এদিন চন্দ্রনাথ সিংহর আইনজীবী পাল্টা দাবি করেন, তথ্যপ্রমাণ ও নথি নিয়ে মুখোমুখি বসানোর প্রয়োজন নেই। তদন্তের জন্যও হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। চার্জশিট জমা দেওয়ার পর, আবার পিছন ফিরে পুরনো কী তদন্ত করতে চাইছে? ইডি বেশ কিছু তথ্য চেয়েছিল, যা কম সময়ে দেওয়া যায় না। এই তথ্য হাতের কাছে থাকে না।