কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল প্রায় ২ কোটি টাকা। খোদ বিশ্ববিদ্যালয় এমনভাবে প্রতারণার শিকার হওয়ায় বড়সড় চাঞ্চল্য শুরু হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ অবশেষে গ্রেফতার করে অভিযুক্তদের। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মী। বুধবার তাঁদের পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে।  


মেয়াদের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ টি ফিক্সড্ ডিপোজিট থেকে সই ও অ্যাডভাইসড্ নোট নকল করে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফিনান্স অফিসার ও রেজিস্ট্রারের সই নকল করে ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলার অভিযোগ ছিল।


ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙানোর চেষ্টা করা হয় ইউকো ব্যাঙ্কের বর্ধমানের বড়বাজার শাখায়। ফিক্সড ডিপোজিটকে বেআইনি ভাবে ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেবার চেষ্টা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন কর্মী এবং বর্তমান এক কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন ওই ব্রাঞ্চের সিনিয়র ম্যানেজার নেহা রানি। ঘটনার পরিপেক্ষিতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মী সেখ এনামুল হক-কে গ্রেফতার করে। যদিও আরেক অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী ভক্ত মণ্ডল এখনও পলাতক।


বর্ধমান থানায়  লিখিত অভিযোগে নেহা রাণী জানান, সম্প্রতি তাঁর কাছে একটি চিঠি আসে যেখানে একটি ফিক্সড ডিপোজিট যার আর্থিক মূল্য ২১.৫৫ লক্ষ টাকা-সেটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার আগেই তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়। নিয়মানুযায়ী স্বাক্ষরকারীর স্বাক্ষর সংক্রান্ত সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই ধরনের কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। এরপরই সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে এই ব্যাপারে এফআইআর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অস্থায়ী কর্মী সেখ এনামূল হক এবং স্থায়ীকর্মী ভক্ত মণ্ডলের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ রুজু করা হয়। 


এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে অন্য ব্যাঙ্কের শাখাতেও এই বিষয়ে জানিয়ে চিঠি দেয়। এরপরই জেলাখানা মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয় তাদের শাখা থেকে তিনটি ফিক্সড্ ডিপোজিট ভাঙিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে প্রায় ২ কোটি টাকা সরানো হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের  রেজিস্ট্রার সুজিত কুমার চৌধুরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩ টি ফিক্সড ডিপোজিট থেকে  প্রায় ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছিল। তিনটি ঘটনাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ফিনান্স অফিসারের সই ও অ্যাডভাইসড্ নোট নকল করা হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে তিনটি ফিক্সড ডিপোজিট সই জাল করে করে সুব্রত দাস ও সাগ্নিক এন্টারপ্রাইজের নামে ট্রান্সফার করা হয়েছে।


এরপরই মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থেকে সুব্রত দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে তাঁকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুব্রত দাস সাগ্নিক এন্টারপ্রাইজের মালিক। 


আরও পড়ুন: দ্বিতীয় প্রার্থীতালিকা প্রকাশ বিজেপির, রয়েছে হেভিওয়েট নাম! কার ভাগ্যে শিকে ছিড়ল?