কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: ভরা বিয়ের আসর। গোটা অনুষ্ঠান বাড়িতে গমগম করছে নিমন্ত্রিতদের নিয়ে। সেখানেই হঠাৎ স্লোগান। চাকরির দাবিতে তারস্বরে স্লোগান উঠছে, তাতে গলা মেলাচ্ছে আরও অনেকে। স্লোগান কানে আসতে চমকে গিয়েছিলেন অভ্যাগতরা। তারপর আওয়াজের উৎস দেখতেই চোখ চড়কগাছ নিমন্ত্রিতদের। কারণ ওই স্লোগান দিচ্ছিলেন খোদ কনে। বিয়ের আসর থেকে স্লোগানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তা ভাইরাল হয়েছে। 


ভাতারের খেড়ুরের বাসিন্দা অভয়া রায়-এর বিয়ের ছবি ছিল এমনই। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কনে অভয়া রায় স্লোগান দিচ্ছেন, 'বিয়ের আসর থেকে দিচ্ছি ডাক বঞ্চিতরা চাকরি পাক'। এখানেই শেষ নয়, তারপরেই কনে বলে উঠলেন,'নিয়োগ নিয়োগ নিয়োগ চাই,বঞ্চিতদের নিয়োগ চাই।' সেই স্লোগানে গলা মেলাচ্ছেন তাঁর বন্ধুরা। স্লোগান শুনেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। বিয়েবাড়িতে এসব কী? এমন প্রশ্নই নিশ্চয় মনে এসেছিল অনেকের। তারপর আসল কারণ দেখে কেউ বা মুচকি হেসেছেন, কেউ আবার প্রাণখুলে। 


কেন এমন বার্তা:
আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা তো বটেই। অভয়া রায় নিজেও একজন চাকরিপ্রার্থী। ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা দেন অভয়া রায়। পাশ করার পর দীর্ঘ দিন বসে থাকতে হয়েছে। ৯ বছর লড়াই করার পরে তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আজও জোটেনি চাকরি। তবে তাঁদের চাকরির দাবিতে আন্দোলন এখনও থমকে যায়নি। একদিকে বঞ্চনা ও অন্যদিকে অযোগ্যদের নিয়োগের প্রতিবাদে তাঁদের লড়াই এখনও চলছে। এরই মধ্যে পরিবারের তরফে অভয়ার বিয়ে ঠিক করা হয়। বিয়ের দিন নিমন্ত্রিত ছিলেন অভয়ার সহযোদ্ধারা। কথা কথায় বিয়ের আসরে তাঁরা অভয়াকে প্রশ্ন করে বসেন, এবার কি তাহলে অভয়া লড়াই থেকে সরে যাবে? তার উত্তরে অভয়া তাঁদের জানায় লড়াই থেকে সরার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বরং এরপর থেকে লড়াই আরও জোরদার হবে। তাই একদিকে লড়াইয়ে থাকার বার্তা দিতে ও অন্যদিকে বিয়েবাড়িতে আসা আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে জনমত গড়ে তুলতে সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিয়ের আসরে স্লোগান দিতে শুরু করেন অভয়া। মেয়ের এই কাজকে সমর্থন করেছেন তাঁর মা।


৬ মে ভাতারের খেড়ুর গ্রামের বাসিন্দা অভয়া রায়ের সাথে ভাতারেরই ছাতনী গ্রামের বাসিন্দা রিন্টু দে-র বিয়ে ছিলো। সেখানেই চারিদিকে যখন আলোর রোশনাই,আত্মীয়স্বজনদের সমাগম, তখনই সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে এমনই স্লোগান দিলেন খোদ কনে। অভয়া রায় জানান, চাকরির দাবিতে ২০১৪ সাল থেকে তাঁরা আন্দোলন করছেন। তাঁদের বঞ্চিত করে অযোগ্যরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। তাই বিয়ের মতো আনন্দের দিনেও একটা হতাশা কাজ করেছে। পাশাপাশি তাঁর সহযোদ্ধারাও হাজির ছিলেন। সেই কারণেই এমন স্লোগান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। 


আরও পড়ুন: পার্ক না কি ট্রেডমিল? দৌড়নোর লাভ কোথায় বেশি? কোনটা বাছবেন?