রাণা দাস, পূর্ব বর্ধমান: দুর্গাপুজো হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্মীপুজোও মিটেছে। এবার আর কদিন পরেই কালীপুজো (Kali Puja 2023)। দুর্গাপুজোর মতোই বাংলার কোণায় কোণায় পূজিতা হন দেবী কালীও। বাংলায় রয়েছে একাধিক শক্তিপীঠও। বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে কালী মাহাত্ম্য। বিভিন্ন জেলায় কালীপুজো নিয়ে নানা কাহিনীও লোকমুখে প্রচারিত। এমনই এক জায়গা পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) কেতুগ্রাম। এখানেই আনখোনা গ্রামে এক পুরনো কালীমন্দিরে পূজিত হন দেবী। কালীপুজো উপলক্ষে সেজে ওঠে গোটা গ্রাম।
কেতুগ্রামের (Ketugram) আনখোনা গ্রাম। গোটা গ্রামে একটাই মাত্র কালী মন্দির রয়েছে। এই গ্রামে নাকি আর কোনও কালী মন্দির নেই। এমন প্রথাই এখানে চলে আসছে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে। লোকমুখে প্রচারিত যে, এই নিয়ম একবার ভাঙা হয়েছিল। কয়েক বছর আগে এই নিয়ম ভেঙেছিল গ্রামেরই একটি পরিবার। বছর কয়েক আগে গ্রামের একটি পরিবার বাড়িতে কালী প্রতিমা আনে। তার পুজোও করে, তারপরে নাকি সেই বাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটে। তাতেই গ্রামের লোকের ধারণা হয় দ্বিতীয় পুজো করার জন্যই এই পরিবারের উপর রুষ্ট হয়েছেন দেবী কালী। তার জন্যই দুর্ঘটনার বিপদ নেমে এসেছে এই পরিবারের উপর। তাই পুরনো কালী মন্দির ছাড়া আলাদা করে কোনও কালীপুজো হয় না কেতুগ্রামের আনখোনা গ্রামে। এমন ভয়ের পিছনে রয়েছে একটি প্রচলিত লোককথা। কথিত আছে এই গ্রামে একবার মহামারী দেখা দিয়েছিল। সেই সময় গ্রামের কিছু মানুষ বীরভূমের মিরাট গ্রাম থেকে দেবী শীতলাকে গ্রামে নিয়ে এসে পুজো করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে নাকি বাধা পড়েছিল। গ্রামের প্রতিষ্ঠিত দেবী কালী নাকি স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন যে, অন্য কাউকে এই গ্রামে আনতে হবে না। তিনিই এই গ্রামকে রক্ষা করবেন। তারপর থেকে এই গ্রামকে সবরকম বিপদে-আপদে রক্ষা করে আসছেন এই দেবী, এমনই বিশ্বাস এই গ্রামবাসীর।
কথিত রয়েছে, অবিভক্ত বর্ধমানের কেতুগ্রামের আনখোনা গ্রামে বর্ধমানের রাজ পরিবার এই কালী প্রতিমা স্থাপন করে পুজো শুরু হয়। বর্ধমান রাজ পরিবারের শেষ রাজা উদয় চাঁদ মহতাব এই পুজোর জন্য ৫ টাকা করে অনুদানও পাঠাতেন। এই পুজো যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য জমি, পুকুর দেবীর নামে দিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাই আজও রাজা উদয় চাঁদ মহতাবের নামেই পুজোয় সংকল্প হয়।
আরও পড়ুন: মায়ের মূর্তির সামনে নর খুলি, ভূত চতুর্দশীতে 'বন্দেমাতরম' মন্ত্রে শুরু হয় কালী-আরাধনা