মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: নিশুতি রাতে মশাল জ্বালিয়ে তন্ত্রমতে চলত মায়ের পুজো (Kalipujo)। ঘোর জঙ্গলে ঘেরা সেই মন্দিরে মায়ের পায়ের কাছেই থাকত শেয়ার ও মানুষের মাথার খুলি। মন্ত্রতন্ত্রে ভূত চতুর্দশীর সেই রাত যেন গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি করত। 


কালের নিয়মে ধীরে ধীরে বদল এসেছে অনেক কিছুতেই। একসময় এই এলাকা আবৃতই ছিল জঙ্গল দিয়ে। জানা যায়, সেই সময় ডাকাতরা মশাল জ্বালিয়ে দেবীর পুজো করত। কালের গভীরে সেই জঙ্গল সাফ হয়ে ধীরে ধীরে গজিয়ে উঠেছে ইঁট কাঠ কংক্রিটের বহুতল। কিন্তু এলাকার মহিমা এখনও একই রকম। স্থানীয়দের বক্তব্য এখনও মন্দির চত্বরে গেলে গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিজ্ঞতা হয়। 


এই পুজো অবশ্য খ্যাত ভবানী পাঠকের কালী নামে। যদিও দেবী চৌধুরানির মন্ত্রদাতা সেই সাধক ভবানী পাঠকের সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও যোগ নেই। স্থানীয়দের দাবি, ঝোপ জঙ্গলে ভরা, অরণ্য মাঝে যেমন কালীপুজো করতেন ভবানী পাঠক, এখানেই তেমনভাবেই পুজো করত ডাকাতরা। পুকুর-সুড়ঙ্গও ছিল এই এলাকায়। শুধু তাই নয়, এলাকাবাসীদের দাবি একসময় এই মন্দিরে এসে আত্মগোপন করেছেন বহু বিপ্লবীও। সেই সকল সূত্রকে গেঁথেই এই পুজোর এমন নামকরণ বলে জানা যায়। 


পুজোর ইতিহাস


গা ছমছমে পরিবেশে তন্ত্র মতে এখনও দৈত্যাকার বট গাছের নিচে পূজিত হন এই মা কালী। জানা যায়, দেশ তখনও স্বাধীন হয়নি, পাল বংশ, সেন বংশের রাজত্বের সময় থেকে বছর বছর ধরে সেই সময় গভীর জঙ্গলের মাঝে হয়ে আসছে এই পুজো। আগে খড়ের চাল দেওয়া মন্দির থাকলেও এখন অবশ্য সেখানে পাকা বাড়ির মত মন্দির তৈরী হয়েছে স্থানীয়দের সাহায্যে। 


কালীমন্ত্রে বিশেষত্ব


ব্রিটিশ আমলে এই কালী মায়ের পুজো করতো বিপ্লবীরাও। তাই এই পুজোর বিশেষ মন্ত্র হল বন্দেমাতরম জয় জয় ভারতবর্ষম। এখনও পুজোর সময়ে উচ্চারিত হয় এই মন্ত্রই। ভুত চতুর্দশীতে অর্থাৎ পুজোর আগের দিন তন্ত্র মতে পুজো হয়। এখনও সেই সময়ের পঞ্চমুন্ডি আসন রয়েছে এই মন্দিরে। শেয়াল ও মানুষের মাথার খুলি ও রয়েছে প্রায় একশ বছর ধরে। মন্দিরের পিছনে আগে ছিল বিশাল জলাশয়, তার পাশে একসময় মৃতদেহ সৎকার করা হত। 


আরও পড়ুন, ৫১ পীঠের শেষ সতীপীঠ, পড়েছিল দেবীর কোমরের অংশ, কঙ্কালীতলার কী মাহাত্ম্য?


স্থানীয়দের মতে, প্রকাণ্ড বড় বড় দৈত্যাকার বট গাছের নিচে এক টুকরো ভয়ার্ত পরিবেশ যেন এখনও বিরাজমান। মন্দিরের সেবাইত মিলন চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দা পরিমল আগস্থি সকলেই এক বাক্যে এই স্থান ও পুজোর মাহাত্ম্যর কথা স্বীকার করেছেন বারংবার।