কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : বর্ধমানে বিয়েবাড়ি। সাজো সাজো রব। কলকাতা থেকে আসছিল একের পর এক মন্ত্রীর গাড়ি। একে একে আশীর্বাদ করে গেলেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার থেকে মন্ত্রী মলয় ঘটক। ভাবছেন কে এই পাত্রী ? কেন তাঁর বিয়েতে এত তারকা সমাহার ? কারণ পাত্রী ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বিধায়ক শম্পা ধাড়া। রাজ্যে বিধানসভা যখন সরগরম, সেই মরশুমেই অঘ্রাণের শুভলগ্নে নতুন জীবন শুরু করলেন তৃণমূল বিধায়ক। আর সেদিন কলকাতা থেকে বর্ধমানে এসে কন্যাদান করলেন রাজ্যেরই এক মন্ত্রী।
সাত পাকে বাঁধা পড়লেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বিধায়ক শম্পা ধাড়া। তিনি গত পঞ্চায়েত বোর্ডে (২০১৮-২০২৩) জেলার সভাধিপতি ছিলেন। গত ২৭ নভেম্বর, সোমবার খণ্ডঘোষের আমরাল গ্রামের গজানন রায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। রায়নার হরিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পাত্র। কীভাবে দুজনের আলাপ ? পরিবার সূত্রে জানা গেল, রীতিমতো দেখা-শোনা করেই বিয়ে ঠিক করেছে পরিবার।
বিধায়কের বিয়ের আসর বসেছিল বর্ধমান শহরের ইছলাবাদের একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে। সে দিন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার ‘কন্যাদান’ করেন। বিধায়ক শম্পা তাঁকে ডাকেন ‘কাকু’ বলে। কলকাতার পার্টির অঢেল কাজ, বিধানসভায় হাজিরার কড়াকড়ি। তাই কন্যাদান করে রাতেই কলকাতা ফিরে যান মন্ত্রী।
বুধবার বর্ধমান ভবনে অতিথি আপ্যায়নের আয়োজন করেছিলেন নবদম্পতি। বর্ধমান ভবনকে আলোয় সাজানো হয়। লাল রঙের শাড়ি আর গয়নায় সেজেছিলেন বিধায়ক শম্পা। বিয়ের সাজে একেবারে অন্যরকম লাগছিল তাঁকে। তাঁর স্বামী গজাননের পরনে ছিল ব্লেজার। বর্ধমান ভবনে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করতে বিধানসভা থেকে ছুটে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়করা। এসেছিলেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি, পুলিশ সুপার আমনদীপ, বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার তাপস ঘোষ-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা। ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তা থেকে আধিকারিকরা।
বিধায়কের বিয়েতে মেনু কী?
পংক্তিভোজন ও ব্যুফে – দু’রকম ব্যবস্থাই রাখা হয়েছিল। মাছের নানা উপকরণ, বেবি নান, মটর পনির, বাসন্তী পোলাও, মুরগির মাংস, সাদা ভাত, খাসির মাংস, আরো কত কী। এ ছাড়াও চাটনি, পাঁপড়, দু’রকম মিষ্টি, আইসক্রিম ও পান ছিল অতিথিদের জন্য। অতিথিদের দেখভাল করছিলেন জেলা পরিষদের একদা সহকর্মী বাগবুল ইসলাম । তার ফাঁকেই তিনি বলেন, “প্রত্যেকেই খাবারের সুনাম করেছে।”
বিয়ে, বৌভাতও ধুমধাম করে হলেও মধুচন্দ্রিমায় যাওয়া হল না। কারণ পাত্রী তো যে-সে নন। রাজ্যের বিধায়ক। বৌভাতের অনুষ্ঠান সেরে পরের দিন অর্থ্যাৎ বৃহস্পতিবার বিধানসভায় গিয়েছিলেন শম্পা। দলের ঘোষিত কর্মসূচি মেনে ধর্নাতেও যোগ দেন। সেখান থেকে খণ্ডঘোষের শ্বশুরবাড়িতে ফিরে এসে শম্পা জানান, “পাহাড়ে যেতে ভাল লাগে। দার্জিলিং যাব ভেবেছিলাম। এখন বিধানসভা চলছে। দলের কড়া হুইপ রয়েছে, সে জন্য বিধানসভা যেতেই হবে। তারপরেই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। সে কারণে আপাতত মধুচন্দ্রিমা বাতিলই করতে হচ্ছে।”
আর বিধায়কের স্বামী? তিনি কী বলছেন? পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক গজানন রায় বললেন, “আমি শিক্ষক হয়েই থাকতে চাই। কাজকর্ম ভাল দেখলে প্রশংসা করব। আবার খারাপ দেখলেও বলব।”
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন :