কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : ১০৪ বছরের পুরনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দুমাস আগেও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরই নির্ভর করে থাকতেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পাঁচড়া গ্রাম ও আশপাশের কয়েক হাজার মানুষ।। অথচ বর্তমানে সেখানে নেই ন্যূনতম কোনও চিকিৎসা ব্যবস্থা। হাসপাতালে ঝুলছে তালা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনটিও। একই অবস্থা ডাক্তার ও কম্পাউন্ডার থাকার কোয়াটারেরও। অভিযোগ রাতে সেখানে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ।
হাল ফেরাতে এবং দাতব্য চিকিৎসালয় চালু করার জন্য বারে বারে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এনেও কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে রুগ্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে বাঁচাতে আদালতের দ্বারস্থ হলেন গ্রামের ৯২ বছরের প্রবীণ শিক্ষক। সঙ্গী আরও একজন গ্রামের কৃষক। তারা দিনগুনছেন বিচারের আশায়।
১৯১৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর তৎকালীন বর্ধমান জেলার ডিভিশনাল কমিশনার ও জেলা শাসক P.H. WADDELL ESO এর হাত ধরে গড়ে ওঠে পাঁচড়া চ্যারিটেবল ডিসপেন্সরি। কিন্তু যেহেতু এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমি হৈমবতী মুখোপাধ্যায়ের নামে গ্রামের এক বাসিন্দা দান করেন তাই গ্রামবাসীদের কাছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পাঁচড়া হৈমবতী দাতব্য চিকিৎসালয় হিসাবেই পরিচিতি লাভ করে। ফলক দুটো আজও জ্বলজ্বল করে জ্বললেও, বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্রটি।
১০৪ বছরের পুরনো এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি একসময় এখানে রমরমিয়ে চলত চিকিৎসা।লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থেকে চিকিৎসা করাতে হতো। বর্হিবিভাগে প্রতি দিন বসতেন অনেক ডাক্তার। এখন সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই দৈন্যদশা। দিনে দিনে কমতে থাকে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা। বেশ কয়েক বছর ধরে ‘শেষ সম্বল’ বলতে ছিলেন এক জন চিকিৎসক। তিনিও গত বছর ডিসেম্বরে অবসর নিয়েছেন।তারপরে একজন কমাউন্ডডার কোনোরকমে পরিষেবা সচল রেখেছিলেন। তিনি কয়েকমাস আগে অবসর নেওয়ায় এখন সেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার মতো নেই আর কেউই। তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
এ বিষয়ে জেলাপরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু জানালেন, 'নতুন করে নিয়োগ হয় নি,প্রয়োজন না থাকায়।কারন নতুব করে প্রতিটি ব্লকে স্বাস্থ্য ও উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে।এমনকি অঞ্চলেও আছে।'
সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পরিষেবা চালু করার দাবি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় ও আর এক গ্রামবাসী চিত্তরঞ্জন নন্দী। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসনে দরবার করেন। চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। 'কিন্তু উত্তর আসেনি' জানান তাঁরা। অবশেষে গত মার্চ মাসে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন তাঁরা।
আদালতের কাছে তাঁদের আবেদন, গ্রামগঞ্জে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে বড় সমস্যা হতে পারে। কয়েক বছর আগেও সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসা হত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আর এখন পুরোপুরি তা তালাবন্ধ। ফের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করার নির্দেশ দেওয়া হোক। কারণ আট-দশটি গ্রামের মধ্যে কোনও হাসপাতাল নেই। রাতবিরেতে একমাত্র ভরসা বলতে রয়েছে ১০ কিলোমিটার দূরে জামালপুর হাসপাতাল ও ১২ কিলোমিটার দূরে মেমারি হাসপাতাল।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করার দাবী নিয়ে ইতিমধ্যেই কোলকাতা উচ্চন্যায়ালয়ের দারস্থ হয়েছে নব্বইঊদ্ধো অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়ের সরকারের কাছে কাতর আবেদন,হাসপাতালটি চালু করে দিন না,গরীব মানুষের খুব ভালো উপকার হয়।বয়সের কারনে সব কথা গুছিয়ে বলতে পারছি না।
গ্রামেরই বাসিন্দা আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, সবধরনের চিকিৎসা হতো,প্রচুর মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেতেন।লাইন দিয়ে রোগী দেখাতে হতো।গরীব মানুষেরা সমস্যায় পড়লেন।বর্তমানে ২ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা ও ঔষধ পাওয়া যেতো।আবার চালু করা হোক স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।
আদালতে আরে এক আবেদন কারী চিত্তরঞ্জন নন্দীর অভিযোগ,জেলা পরিষদের অধীন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র।আমাদের দাবী রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এই হাসপাতালের দায়িত্ব নিক।আমরা আদালতের দারস্থ হয়েছি যাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্ত্ব নিয়ে এটা খুলুক।
আমরা কোলকাতা উচ্চন্যায়ালয়ের দারস্থ হয়েছি
মামলার আইনজীবী রবিশংকর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন,স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি কলেরার প্রাদুভাবের কথা মাথায় রেখে তৈরী হয়েছিল,ঠিক তার ১০০ বছর পর যেখানে গোটা বিশ্বে করোনা মহামারীর প্রকোপ চলছে সেই সময় বন্ধ করে দেওয়া হল স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু থাকলে এখান থেকেই ভ্যাকসিনেসন থেকে রোগীর চিকিৎসা সবকিছুই সম্ভব হতো।গত ১৯ শে মার্চ প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চে মামলা করা হয় যাতে জেলা পরিষদের হাত থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অধিগ্রহণ করে চালু করে।আগামি ৫ ই অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানী।