রাণা দাস, কাটোয়া (পূর্ব বর্ধমান): ফের একবার ভক্ষকের রূপে দেখা দিল রক্ষক নিজেই। যার কাজই ছিল নাবালিকার বিয়ে আটকানো, সেই চাইল্ড লাইনের কর্মীই বিয়ে করল এক নাবালিকাকে। গ্রেফতারও হতে হয়েছে তাকে তার এই কর্মের জন্য। পঞ্চাশ জনেরও বেশি নাবালিকার বিয়ে আটকে আজ অরূপ সাহা নিজেই নাবালিকাকে বিয়ে করে আপাতত হাজতে। নাবালিকার মা-বাবাকে আশ্বস্ত করে অরূপ বাবু, যে সে নিজে যেহেতু চাইল্ড লাইনের কর্মী, তাই তাঁদের নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে করলে কোনও অসুবিধা হবে না। তবে শেষ রক্ষা পেল না অরূপ বাবু। নাবালিকাকে বিয়ের দায়ে তাকে গ্রেফতার করল কাটোয়া থানার পুলিশ।
অভিযুক্ত অরূপ সাহা কাটোয়া চাইল্ড লাইন সাব সেন্টারের কর্মী ছিল। কয়েক বছর ধরেই এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত তিনি। কাটোয়া মহকুমার কোথাও কোনও নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে জানতে পারলে অরূপ বাবুই পুলিশ নিয়ে পৌঁছে যেত সেই বিয়ে বাড়িতে । সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা হত নাবালিকার বিয়ে। সেই চাইল্ড লাইনের কর্মী অরূপ বাবু এই বছরের জুলাই মাসের এক তারিখে বিয়ে করে। বিয়ের কয়েকদিন পরই চাইল্ড লাইনের টোল ফ্রি নম্বরে অজ্ঞাত পরিচয় কোনও একজন ফোন করে অরূপ বাবু যে নাবালিকাকে বিয়ে করেছে, সেই অভিযোগ জানায়।
অভিযোগ পেতেই চাইল্ড লাইন খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে তাদেরই কর্মী অরূপ সাহা রীতিমতো ধুমধাম করে ১৬ বছরের নাবালিকাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের ভিডিও, ছবি তাদের হাতে এসে পৌঁছয়। এরপরেই ডিস্ট্রিক্ট সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসার কাটোয়া থানায় অরূপ সাহার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গতকাল রাতে অরূপ সাহাকে গ্রেফতার করেছে কাটোয়া থানার পুলিশ। নাবালিকার মা, বাবা জানান, তাঁদের ১৬ বছরের মেয়েকে অরূপ সাহার সঙ্গে বিয়ে দিতে তাঁরা একেবারেই রাজি ছিলেন না। কিন্তু অরূপ সাহাই জোর করেন বিয়ের দেওয়ার জন্য। তিনি এমনও আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি নিজে চাইল্ড লাইনে কাজ করেন, তাই নাবালিকা বিয়ে করলে তার কোনও অসুবিধা হবে না।
অন্যদিকে অভিযুক্ত অরূপ সাহার পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন, অরূপ বাবু কোনও নাবালিকাকে বিয়ে করেনি। যে ছবি দেখানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ সুপার ইম্পোজ করা হয়েছে। এদিকে পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে অরূপ বাবুর সঙ্গে ওই নাবালিকার বিয়ের মালাবদল থেকে সিঁদুর দান, সমস্ত কিছুর ছবি। চাইল্ড লাইনের কর্মী হয়ে নাবালিকাদের বিয়ে আটকে যে অরূপ বাবু একসময় হিরো হয়ে উঠেছিল, আজ সেই অরূপ সাহাই চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্টে গ্রেফতার।