কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: বয়স সাতাত্তর  ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২০০৪ সালে স্কুলের  শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পরেও শিক্ষা দান থেকে ছুটি নেননি। সরকার তাঁর এই শিক্ষাদানকে সম্মান জানিয়ে এই বছর মার্চ মাসে তাঁকে 'পদ্মশ্রী' সম্মানে সম্মানিত করেছে।


তাঁর নাম সুজিত চট্টোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের উত্তর রামনগরের বাসিন্দা। সাতাত্তর পেরিয়ে যাওয়া ‘মাস্টারমশাই’ নিজের বাড়িতেই খোলেন পাঠশালা। যা এলাকাবাসীর কাছে ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’ নামেই পরিচিত।


কিন্তু কেন সদাই ফকির নাম? তার উত্তরে মাস্টারমশাই জানান, ‘ছাত্র ছাত্রীরা ভাবতেন আমার অনেক টাকা, কিন্তু পেনশনের টাকা ছাড়া আমার আর কিছু নেই। তাই আমি নাম নিয়েছি সদাই ফকির।’


সেই পাঠশালায় বার্ষিক ২ টাকা গুরুদক্ষিণার বিনিময়ে  এলাকার আদিবাসী পরিবার থেকে গরিব ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাদান কর চলেছেন সুজিত বাবু। আউশগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম উত্তর রামনগর। পুরো আউসগ্রামই জঙ্গলমহল। বাংলায় স্নাতকোত্তর সুজিত চট্টোপাধ্যায় ১৯৬৫ সালে উত্তর রামনগর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতা জীবনে স্কুল ছুটির পর পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের তিনি বিশেষ ক্লাস নিতেন। একই সঙ্গে জনজাতি পরিবারের শিশুদের স্কুলমুখী করার কাজও তিনি চালিয়ে গিয়েছেন। ২০০৪ সালে স্কুল শিক্ষক জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর সুজিত বাবু নিজের বাড়িতেই আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের তিনি পাঠদান শুরু করেন। পেনশনের টাকার একাংশ খরচ করে তিনি পড়ুয়াদের বই খাতাও কিনে দিতেন।


শিক্ষা দানের জন্য পারিশ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে প্রবল  আপত্তি ছিল সুজিতবাবুর। কিন্তু অবশেষে  ছাত্র ছাত্রীদের দাবি মেনে নেন তিনি। গুরুদক্ষিণা হিসাবে প্রথমে বছরে ১ টাকা গুরুদক্ষিণা নিতেন। বর্তমানে বছরে ২ টাকা নেন। বর্তমানে তাঁর ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা তিনশোরও বেশি। তাদের বেশির ভাগই আদিবাসী ও সংখ্যালঘু ও দরিদ্র পরিবারের। সুজিত বাবু মাধ্যমিক স্তরে বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস এবং উচ্চমাধ্যমিক ও  স্নাতক স্তরে বাংলা পড়ান।


এছাড়াও গরিব পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা দানের পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদেরও তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করেন সুজিত বাবু। এই ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করে ছাত্রছাত্রীরা। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী গরিব থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পরিবার গুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য ১০০ টাকা করে সাহায্য করেন তাঁদের মাস্টার মশাইকে। পদ্মশ্রী প্রাপক মাস্টার মশাই তাঁদের গ্রামে থাকার জন্য গর্বিত ছাত্রছাত্রীরাও।